রাজশাহীর পারিশ্রমিক সমস্যায় আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রথমবার পুরো দলের অনুশীলন বয়কট, পরে বিদেশি ক্রিকেটারদের ম্যাচ খেলায় আপত্তি এবং হোটেলে থেকে যাওয়া, একাধিকবার পারিশ্রমিকের চেক বাউন্স হওয়া, এক বিদেশি ক্রিকেটারের বিসিবিতে অভিযোগ জানানো- বারবার এমন সব নেতিবাচক খবরে শিরোনাম হয়েছে দুর্বার রাজশাহী। বারবার সময় দিয়েও মেলেনি সমাধান। এবার শেষবারের মতো দেখবে বিসিবি। বিষয়টির সুরাহা না হলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে প্রথম প্রকাশ্যে আসে রাজশাহীর পারিশ্রমিক সমস্যা। বন্দর নগরীতে গিয়ে প্রথম দিন অনুশীলন করেননি দলটির ক্রিকেটাররা। পারিশ্রমিকের এক টাকাও না পাওয়ায় সেদিন সকালে মাঠে যেতে রাজি হননি তারা। এমনকি পরের ম্যাচ বয়কটের হুমকিও দেন এনামুল হক, তাসকিন আহমেদরা।
পরে বিসিবির হস্তক্ষেপে নগদ ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হলে মাঠে নামেন দলটির ক্রিকেটাররা। সেদিনই আরও ২৫ শতাংশ অর্থের চেক দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু চট্টগ্রামে এক দফা, পরে ঢাকায় ফিরে আরেক দফায় ব্যাংক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয় তাদের চেক।
এসব সমস্যার কোনো সমাধান না পাওয়ায় রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলতে মাঠেই আসেনি দলটির বিদেশি ক্রিকেটাররা। এছাড়া রাজশাহীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার লাহিরু সামারাকুন সংবাদমাধ্যমে জানান, পারিশ্রমিক না পাওয়ায় বিসিবিতে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সব কিছু মিলিয়ে অন্যান্য সব ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিনিধির সঙ্গে বিসিবিতে তলব পড়ে রাজশাহীর কর্ণধার শফিক রহমানেরও। গত মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন জানান, পারিশ্রমিক সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য চিত্র দেখে রাজশাহীকে কিছু দিন সময় দিয়েছেন তারা।
এর মাঝেই দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা; টুর্নামেন্টের প্রথম পর্ব থেকে-
রাজশাহী বিদায় নিলেও পারিশ্রমিক ও দেশে ফেরার বিমানের টিকেট না দেওয়ায় হোটেলে আটকা দলটির বিদেশি ক্রিকেটাররা। তাই কিছুদিন সময় দেওয়ার সপ্তাহ ঘোরার আগেই শনিবার আরও একবার বিসিবিতে ডাক পড়ে রাজশাহীর কর্ণধারের।
এবার বিসিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনিই বলেন, রাজশাহীকে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
“আমি আজকে (শনিবার) সরাসরি রাজশাহীর মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদেরকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, পারিশ্রমিক সমস্যার সমাধান করবেন। আমরা বলে দিয়েছি, তিনি যদি তা (সমাধান) করতে ব্যর্থ হন বা না করেন, তাহলে পরবর্তীতে আমরা আর কথা বলার মধ্যে থাকব না। আমরা আইনী ব্যবস্থা নেব।”
পারিশ্রমিক সমস্যার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক আরও বিষয়ে আসরের মাঝপথ থেকে রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির আর্থিক সক্ষমতা নিয়েও উঠেছে অনেক প্রশ্ন। সবকিছু মিলিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, কোন বিবেচনায় শফিক রহমানের ভ্যালেন্টাইন গ্রুপকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিসিবি?
উত্তরে নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নেন বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন।
“আমার মনে হয়, আমরা যথেষ্ট ভালোভাবে বিচার-বিবেচনা করিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার ক্ষেত্রে। তাদের আর্থিক সক্ষমতা, অভিজ্ঞতার ব্যাপারে, যতটুকু হিসেব নিকেশ করা দরকার ছিল, এই বিষয়গুলো যথাযথ যাচাই-বাছাই না করে বোধহয় তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। যার ফলশ্রুতিতে এমন একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।”
এসময় রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বিপিএলে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার পেছনের বাস্তবতা তুলে ধরেন বিসিবি সভাপতি ও টুর্নামেন্ট গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ।
“ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আলাপ করেছি। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ক্রিকেটাররা এসেছিল বিসিবিতে। মুশফিক-মিরাজরা ছিল। তারা তখন অনুরোধ করেছে, এতগুলো ক্রিকেটারের টাকা (আয়ের উপায় বিপিএল)… রাজশাহী যেটা করেছে, এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না, একটা টুর্নামেন্টকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য।”
“(ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার ক্ষেত্রে) আমার অপশন খুব বেশি ছিল না। আমার সঙ্গে সদস্য সচিব ছিল। আরও কয়েকজন ছিল। (বিপিএল আয়োজনের জন্য) আমাদের চাপ ছিল না। তবে আমরা ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। বিপিএলে পারিশ্রমিক সমস্যা আগেও ছিল জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, পরের আসরে এসব থেকে বেরিয়ে আসবেন তারা।
“গত বছর তিনটা দল ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেয়নি, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাকি ছিল। তো এই পারিশ্রমিক সমস্যা কিন্তু গত ১১ বছরের ইতিহাস। আমরা এমনভাবে কথা বলছি যেন, বিপিএল আগে শতভাগ ঠিক ছিল, এবার এসে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা তেমন না। বুঝতে হবে বিষয়গুলো। ক্রিকেটারদের আবেগের বিষয়টা ছিল। তারা যখন বলেছে, তাদের কথাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
“আমি মাত্র এলাম, আমাকে কিছুদিন সময় দেন। যে ইস্যুটা হয়েছে ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে, আমি স্বীকার করছি। তবে আগে যে বিপিএলের ভাবমূর্তি খুব ভালো ছিল সেটাও নয়। আমরা এখান থেকে বের হয়ে আসব। অপেক্ষা করেন, বিপিএল কীরকম হবে, সময়ই বলে দিতে পারবে। সভাপতি হিসেবে আমি দায় মেনে নিচ্ছি। আমাদের যতটা যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন ছিল, আমরা করিনি।”
পরে অন্যান্য চাপের কথা উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, পরবর্তীতে আলোচনা করবেন।
“অন্য চাপগুলো চিন্তা করেন। দলগুলোকে দুই মাস আগে জানাতে হবে যে বিপিএল করব। তা না হলে (বিদেশি) ক্রিকেটাররা অন্য টুর্নামেন্টে চলে যাবে। বিপিএল শুরু হবে ডিসেম্বরে। আমরা অক্টোবরের ১৫ তারিখের মধ্যে ড্রাফট করে ফেলেছি। বুঝতে হবে পরিস্থিতি কী ছিল। আপনাদের সঙ্গে আমি পরে আরেক দিন কথা বলব। মাননীয় উপদেষ্টাকে এখানে অপেক্ষা করাতে চাই না।”