টাস্কফোর্সের সুপারিশে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ: ব্যাংক খাত ও মেগা প্রকল্পে অনিয়ম
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি গঠিত একটি টাস্কফোর্স দুর্বলভাবে পরিচালিত ব্যাংকগুলোর জন্য এক্সিট পলিসি প্রণয়ন এবং নতুন ব্যাংক লাইসেন্স ইস্যু বন্ধের সুপারিশ করেছে।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি ব্যাংকিং খাত গড়ার ওপর জোর দিয়ে টাস্কফোর্সটি একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকানা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে থাকা প্রতিরোধেরও আহ্বান জানিয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জবাবদিহির অভাবের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাইবার হ্যাকারদের মাধ্যমে ৬৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা চুরি হওয়ার পর তৎকালীন গভর্নর পদত্যাগ করলেও, এখনো তাকে বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা হয়নি।
প্রতিবেদনে সিআইডি কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন ৮০ বার পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের দুর্দশার জন্য রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ বিতরণ, ঋণ পুনঃ তপশিলের অপব্যবহার, এবং ঋণ অবলোপনের মতো অনিয়মকে দায়ী করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি ব্যাংকের শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে দেশের আটটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় ৭.৫২ বিলিয়ন ডলার বা ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দুর্বলতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রকল্পগুলোর তালিকা:
পদ্মা সেতু প্রকল্প
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প
যমুনা রেল সেতু প্রকল্প
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প
বঙ্গবন্ধু টানেল
ঢাকা এমআরটি লাইন-৬
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন-৩ প্রকল্প
প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক ব্যয় ১১.২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৮.৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের চাপ এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রভাব প্রকল্পগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নে বিলম্বের জন্য দায়ী। ভূমি অধিগ্রহণের বিলম্ব, দুর্নীতিগ্রস্ত মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, এবং প্রকল্পগুলোর অস্বাভাবিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অভ্যাসও এর জন্য দায়ী।
গণতান্ত্রিক শাসন ও সুশাসন নিশ্চিতের সুপারিশ
সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘অ্যান্টিগুন স্কোয়াড’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ টেকনোক্র্যাটদের নিয়োগের মাধ্যমে পেশাদার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
টাস্কফোর্স মনে করে, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইকে জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সুশীল সমাজ ও নাগরিক উদ্যোগকে যুক্ত করার মাধ্যমে কাঠামোগত কৌশল নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের এ সুপারিশগুলো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের পথ দেখাচ্ছে। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করতে এ ধরনের সুপারিশ কার্যকর করা সময়ের দাবি।