ব্যাংকখাতের দুর্নীতি: ঋণের নামে অর্থ লোপাট ও টাকা পাচার নজিরবিহীন

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যাংকখাত থেকে অর্থ পাচারের ঘটনাগুলো গত কয়েক বছরে গুরুত্ব পেয়েছে, এবং দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১১ জানুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন যে,

“বাংলাদেশের মতো ব্যাংকখাত থেকে ঋণের নামে এতো পরিমাণে অর্থ লোপাট ও টাকা পাচার পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয়নি।”

বাংলাদেশের ব্যাংকখাত থেকে বিশাল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ একাধিকবার উঠেছে। বহু ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা দেশে ও বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল করে দিয়েছে। এই পাচারিত অর্থের কিছু অংশ এখন বিদেশে রয়েছে, এবং সেগুলোর উদ্ধার প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন যে, ব্যাংক থেকে ঋণের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় তারা বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন এবং সাড়া পাচ্ছেন। বিদেশে যেসব গ্রুপ ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন, তাদের টাকা উদ্ধার করার জন্য বিদেশি লিগাল ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। এই ফার্মগুলো যদি টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা ১০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন।

গভর্নর আহসান মনসুর আরও জানিয়েছেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার, যা চার মাসের আমদানি বিল পরিশোধের জন্য যথেষ্ট।

গত ছয় মাসে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স নেট ৩ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। এই বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। তবে, ২০০৮ সালে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বাংলাদেশ ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি পেমেন্ট ওভারডিউয়ের মুখে ছিল, যা বর্তমানে ২০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা পরিহার করা যাবে না যদি না ব্যাংক খাতের এই অনিয়মগুলো ঠিকমতো তদন্ত করা এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি ও পাচার বন্ধ না করলে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামগ্রিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এই অনুষ্ঠানে শীর্ষ রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী ১০টি ব্যাংককে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তারা হল: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম ও অর্থ পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিদেশি সহযোগিতা এবং সুশাসনের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা জরুরি। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব এবং জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।