সুনামগঞ্জে বাঁধের কাজ শুরু হয়নি, পিআইসি গঠনে দুর্নীতি অভিযোগ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ গত ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও, নির্ধারিত সময়সীমার ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও বেশ কিছু উপজেলায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন ও কার্যাদেশ প্রদানে অনিয়ম ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে তাদের কষ্টার্জিত ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দিরাই, শাল্লা এবং তাহিরপুর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুগতদের পিআইসি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দিরাই উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মোনায়েম হোসেন এবং শাল্লার রিপন মিয়া টাকার বিনিময়ে পিআইসি বরাদ্দের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা জানিয়েছেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর কাজে আলাদাভাবে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেছেন, “যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হয়, তবে আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। আমরা দ্রুত কাজ শুরু এবং শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হবে।”
সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, “আমরা কোনো প্রকার অনিয়ম মেনে নেব না। বাঁধের কাজ সময়মতো শেষ না হলে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।”
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলার ৫৩টি হাওরে ৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৬৭৫টি বাঁধের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, “কিছু এলাকায় পানি না নামার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে আমরা দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার চেষ্টা করছি।”
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া জানিয়েছেন, “৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পানি নামলে বাকি কাজও দ্রুত শুরু হবে।”
কৃষকরা দ্রুত পিআইসি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ শুরু এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল নিয়ে এই অনিশ্চয়তা শুধু কৃষকদের নয়, পুরো জেলার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও দ্রুত পদক্ষেপই কেবল এই সমস্যার সমাধান আনতে পারে।
সংবাদ প্রেরক:
কুলেন্দু শেখর দাস