গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মঞ্চে; খালেদা জিয়ার পথচলা

টুইট ডেস্ক: ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময় খালেদা জিয়া ছিলেন ঢাকার সেনানিবাসে দুই শিশু সন্তান নিয়ে সাধারণ গৃহবধূ। তার স্বামীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে তখন দলে মতবিরোধ চলছিল। অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, কিন্তু বয়স ও রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে তিনি শক্তিশালী নেতৃত্ব দিতে পারেননি।

জিয়াউর রহমানের হত্যার পর খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে তৎকালীন দলের ভেতরে আলোচনা শুরু হয়। প্রভাবশালী সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ সাত্তারকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ চাইছিল খালেদা জিয়া নেতৃত্বে আসুক। যদিও রাজনীতি নিয়ে তার আগ্রহ ছিল সীমিত, এবং পরিবার থেকেও তেমন উৎসাহ পাননি।

১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এরপর ৭ নভেম্বর তিনি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ভাষণ দেন। দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের সমর্থনে তিনি দ্রুত দলের ভেতরে প্রভাব বিস্তার করেন।

দলের নেতৃত্ব নিয়ে বিচারপতি সাত্তার এবং খালেদা জিয়ার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক, কিন্তু দলের চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে সাত্তারের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে যায়।
বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া

১৯৮৩ সালে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে তিনি বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়। খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। তার শাসনকাল ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সময়কালের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের ফলে বিএনপি বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপে পড়ে। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে ২০২০ সালে তাকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলেও রাজনীতিতে সক্রিয়তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
নতুন চ্যালেঞ্জ

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।