ভারতে নতুন টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ‘এসএন ২০২৩এএফ’ সুপারনোভা
টুইট ডেস্ক : ভারতীয় জ্যোতির্বিদেরা সম্প্রতি একটি টেলিস্কোপ চালু করেছেন। নবনির্মিত টেলিস্কোপের নাম ইন্টারন্যাশনাল লিকুইড মিরর টেলিস্কোপ (আইএলমিটি)। নতুন এই টেলিস্কোপ যাত্রার শুরুর পরই প্রথম একটি সুপারনোভা চিহ্নিত করেছে। এই সুপারনোভার নাম ‘এসএন ২০২৩এএফ’। টেলিস্কোপের অনুসন্ধানপ্রক্রিয়া বেশ কার্যকর বলে দাবি করছেন জ্যোতির্বিদেরা। এর মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে শ খানেক নতুন সুপারনোভা শনাক্ত করা যাবে। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় লিকুইড মিরর টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপে পারদের উপকরণ ব্যবহার করে আয়নার তল তৈরি করা হয়েছে।
সুপারনোভাকে বাংলায় অতি নবতারা বলা হয়। সুপারনোভা বা অতি নবতারা হলো শক্তিশালী ও আলোকিত নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ, যা আমাদের তারা ও ছায়াপথের বিবর্তন আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বর্ণালির ওপর ভিত্তি করে সুপারনোভাকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু সুপারনোভা দেখা যায়। টাইপ ওয়ান সুপারনোভার বর্ণালিতে হাইড্রোজেনের অভাব থাকে। অন্যদিকে টাইপ টু সুপারনোভাতে হাইড্রোজেনের বর্ণালি রেখা দেখা। সাধারণভাবে সুপারনোভা হলো কোনো তারার একটি শক্তিশালী ও আলোকিত বিস্ফোরণ। সুপারনোভার মতো মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে, যখন বিবর্তন পর্যায়ে কোনো বিশাল নক্ষত্রের শেষ অবস্থায় অবস্থান করে বা যখন কোনো সাদা বামন তারকায় পারমাণবিক ফিউশন ঘটে।
টেলিস্কোপের কাজ ও সুপারনোভা নিয়ে আর্কাইভ নামের বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানান, নতুন টেলিস্কোপটি চার মিটার ব্যাসের জেনিথ-পয়েন্টিং টেলিস্কোপ, যা ভারতের নৈনিতালে দেবস্থল অবজারভেটরিতে অবস্থিত। টেলিস্কোপটি হিমালয়ের ২ হাজার ৪৫০ মিটার উচ্চতা থেকে গ্রহাণু, সুপারনোভা, মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ এবং অন্য সব মহাকাশীয় বস্তু পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতে উত্তরাখন্ডের দেবস্থল মানমন্দির থেকে মহাকাশে আলোর খোঁজ করছে টেলিস্কোপটি। জেনিথ-পয়েন্টিং টেলিস্কোপ সেসব টেলিস্কোপকে বোঝায়, যাদের ঠিক সোজা আকাশের দিকে স্থাপন করা হয়। আপনি জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বাকিয়ে ঠিক ওপরে আকাশের দিকে তাকালেই আপনার জেনিথ-পয়েন্ট তৈরি হয়।
নতুন টেলিস্কোপ পুরোপুরি ফটোমেট্রিক বা অ্যাস্ট্রোমেট্রিক ডাইরেক্ট ইমেজিং জরিপ করতে কাজ করছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করছেন নতুন টেলিস্কোরে মাধ্যমে অনেক নতুন ক্ষণস্থায়ী বস্তুর খোঁজ মিলবে। সুপারনোভা থেকে গামা-রশ্মি বিস্ফোরণের সংকেত শনাক্ত করতে সাহায্য করবে এটি।
টেলিস্কোপটি ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল প্রথম আকাশে চোখ মেলে। ভারতের আর্যভট্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব অবজারভেশনাল সায়েন্সেস (এআরআইইএস) জ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রজেশ কুমারের নেতৃত্বে একটি দল টেলিস্কোপের মাধ্যমে কাজ করছেন। সুপারনোভাটি প্রথম চলতি বছরের ৯ মার্চ টেলিস্কোপের চোখে পড়ে। টেলিস্কোপটি কাজের শুরুর সময়েই সুপারনোভাটির খোঁজ পায়। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হলে সুপারনোভার অস্তিত্ব জানা যায়। টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে সুপারনোভায় হাইড্রোজেন রেখা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ধাতব রেখার সন্ধানও পাওয়া যায় সুপারনোভার বর্ণালিতে। আলোর বক্ররেখা ও বর্ণালি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে টাইপ টু-পি সুপারনোভা হিসেবে শ্রেণীকরণ করে। সূত্র: ফিজ ডট অর্গ