যেভাবে আমরাই ডেকে আনি ব্রেন স্ট্রোকের মতো ভয়ঙ্কর বিপদ

স্বাস্থ্য ডেস্ক : বর্তমান দ্রুততার জীবনে ব্রেন স্ট্রোকের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। নিজেদের ভুলেও অনেক সময় আমরাই কিন্তু ডেকে আনি ব্রেন স্ট্রোকের মতো ভয়ঙ্কর বিপদ। কারণ আমরা প্রায় ক্ষেত্রেই বুঝতে পারি না আমাদেরই কিছু ভুল কী ভাবে আমাদের জীবনে মৃত্যু ডেকে আনে।

এই প্রতিবেদনে আমরা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কে জানাবো। কারণ এই সংক্রান্ত কিছু বিশেষজ্ঞদের মত আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি জানা থাকলে তবেই কিন্তু আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারব। আসুন জেনে নিন কোন অভ্যাসগুলি আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে বা ছেড়ে দিতে হবে।

ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ

ব্রেন স্ট্রোক একটি বিপজ্জনক স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা কখনও কখনও জীবনের জন্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। এর পিছনে অনেক কারণ আছে, তবে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণে। বিখ্যাত নিউরোসার্জন ডক্টর গৌরব বানসালের মতে, কিছু বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, কিছু কিছু আমাদের জীবনধারার অভ্যাসই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেন স্ট্রোককে আমন্ত্রণ জানায় আমাদের অজান্তে।

১. ধূমপান

ধূমপান ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। এর কারণে রক্তনালী সরু ও শক্ত হয়ে যায়, যা রক্ত ​​জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বেশি ধূমপানের অভ্যাস থাকলে শিগগিরই সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা ও গাজার মতো অভ্যাস অবিলম্বে ত্যাগ করুন।

২. ডায়েট

স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার স্থূলতা এবং রক্তচাপ বাড়ায়। উভয়ই স্ট্রোকের জন্য অনেকাংশে দায়ী। ফল, সবজি এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩. ব্যায়ামের অভাব

ব্যায়াম বা শরীরচর্চা না করা এবং বসে থাকার মতো জীবনধারা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকে। এর সাহায্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে।

৪. অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন

যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং হৃদস্পন্দনও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এ কারণে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। অতএব, সম্পূর্ণরূপে অ্যালকোহল আসক্তি প্রতিহত করুন।

৫. স্ট্রেস

অতিরিক্ত মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব আপনার মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।

৬. স্থূলতা

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অবস্থার কারণ হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা যায়।

৭. ঘুমের অভাব

ঘুমের অভাব শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একজন সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় বিভিন্ন রোগ

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের মতো রোগও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ। তাই এইগুলি উপেক্ষা না করে নিয়মিত চেকআপ করাতে থাকুন।

৯. ওষুধকে উপেক্ষা করা

আপনি যদি উপরে উল্লিখিত কোনও রোগে আক্রান্ত হন আর চিকিত্সার জন্য ডাক্তারের দেওয়া ওষুধগুলি না খান তবে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়বে।

১০. হাইড্রেটেড না থাকা

ডিহাইড্রেশন এমন একটি কারণ যার ফলে রক্ত ​​​​জমাট বাঁধতে পারে। সঠিক পরিমাণে জল পান করলে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

আপনার অভ্যাস পরিবর্তন করুন

স্ট্রোকের মতো গুরুতর পরিস্থিতিতে রোগীর এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। যদিও জেনেটিক্স এবং ক্রমবর্ধমান বয়স এমন কিছু কারণ যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু আমরা চাইলেই জীবনযাত্রার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অতএব, আপনার দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি এবং খাদ্যাভ্যাস বেছে নিন, তবেই অনেকাংশে আপনি ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।