এবার হিজবুল্লাহ ‘নির্মূলে’ পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামছে ইসরায়েল

টুইট ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সেনাবাহিনীকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘পূর্ণ শক্তিতে’ লড়াইয়ে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।

লেবাননে তিন সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব গত বুধবারই দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশ। কিন্তু যুদ্ধবিরতির সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ বলেছেন, “কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না।”

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৯২ জন নিহত হয়েছে। সোমবারের হামলার পর থেকে আরও শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বৈরুতের দক্ষিণে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর ড্রোন ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ সুরুর নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে তারা।

সোমবার থেকে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চলতে থাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা বাড়ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা বাড়তে থাকায় লেবাননে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের অন্যান্য মিত্ররা।

১১টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সমস্যার ‘কূটনৈতিক সমাধানের সুযোগ করে দিতে’ অবিলম্বে ২১ দিন লড়াই বন্ধ রাখা এবং গাজায়ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।

তবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল হামলা থামাবে না। তাদের উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিজ ঘরবাড়িতে নিরাপদে ফিরতে না পারা পর্যন্ত তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখবে।

পরে অবশ্য হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েল হামলা চালিয়ে যাবে বলে নেতানিয়াহু দাবি করলেও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ইসরায়েলের সঙ্গে ‘সমন্বয়’ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও লেবাননে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

গত প্রায় এক বছর ধরে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রকেটে, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকবাহী ড্রোন হামলা চালাচ্ছে ইরান সমর্থিত লেবাননি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলেও পাল্টা গোলা ছুড়ে ও বিমান হামলা চালিয়ে জবাব দিয়ে আসছিল।

হামলা শুরুর পর থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে প্রায় ৭০ হাজার ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর লেবাননে সোমবার থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

সম্প্রতি ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে। নতুন এই আক্রমণে দুইপক্ষের লড়াই পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে আর তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ধূমায়িত হচ্ছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, বৃহস্পতিবার তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

এদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা কিরিয়াত আতা বসতি লক্ষ্য করে ৫০টি রকেট এবং সাফেদ শহরের দিকে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননজুড়ে একযোগে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তারপর আবার রেডিও ডিভাইস বা ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়।

এই দুই আলাদা ঘটনায় লেবাননে কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ এই ঘটনার পেছনে ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে। যদিও ইসরাইল এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।