গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় ইসরায়েল সরকারের কাছে আশ্রয় চান তমিজি হক

হক গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আদম তমিজি হক

টুইট ডেস্ক : আদম তমিজি হক ফেসবুক লাইভে দাবি করেছেন, আমি ইসরায়েল সরকারের কাছে আশ্রয়ের দাবি জানাতে চাইছি। আমি বাংলাদেশে আছি। আমি বাংলাদেশ সরকারের হামলার শিকার। তারা (সরকার) গত তিন দিন ধরে আমার উপর হামলা চালাচ্ছে। আমাদের দ্রুত উদ্ধার করা দরকার ইসরায়েল সরকারের। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে র‍্যাবের একটি দল রাজধানীর গুলশান-২ এর ১১১ নম্বর রোডের ওই বাসায় অভিযান চালায়।

শিল্পপতি আদম তমিজি হককে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে রাজধানীর গুলশানের বাসার সামনে তিন দিন ধরে অবস্থান নিয়ে আছে র‌্যাব। এই অবস্থা তুলে ধরে হক গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিজেকে জন্মসূত্রে ইহুদি দাবি করে তাকে উদ্ধারে ইসরায়েল সরকারের সহায়তা চেয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুক্রবার এক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান। আমি ইসরায়েল সরকারের কাছে আশ্রয়ের দাবি জানাতে চাইছি। তারা (সরকার) গত তিন দিন ধরে আমার উপর হামলা চালাচ্ছে। আমার (বাসায়) বিদ্যুত, পানি, খাবার নেই। আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। সে মানসিক পীড়ায় আছে। আমাদের দ্রুত উদ্ধার করা দরকার ইসরায়েল সরকারের।

নিজের মাকে পোল্যান্ডের বংশোদ্ভূত পরিচয় করিয়ে আদম তমিজি বলেন, আমার মা আধা পোলিশ। আমি জন্মসূত্রে ইহুদি। আমি নিজেকে ইহুদি ধর্মাবলম্বী হিসেবে দাবি করতে চাইছি। একই সঙ্গে ইসরায়েলি নাগরিকত্ব দাবি করতে চাইছি।

এর আগে লাইভে এসে শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গিয়ে নামাজ পড়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে কারামুক্ত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এই শিল্পপতি।

নিজেকে ইহুদি দাবি করে ইসরায়েলের সাহায্য চাইলেন আদম তমিজি গুলশানে আদম তমিজি হকের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে আছে র‌্যাব। আদম তমিজি হকের নামে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দক্ষিণখান থানায়। মামলা হয়েছে এসবিএমপির অধীনে । এই মামলায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কঠোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

অপদিকে হক গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আদম তমিজি হককে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান জানিয়ে র‌্যাব বলেছে, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে গ্রেপ্তার করা হবে এ শিল্পপতিকে।

আদম তমিজির নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলা রয়েছে, তার বাসায় অভিযানের সার্চ ওয়ারেন্টও রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সকল নিয়ম মেনেই বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট ও ডাক্তারসহ আমরা তাকে আইনের আওতায় আনতে বাসায় যাই, কিন্তু অভিযান চলাকালে তিনি বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান।

তার বাসায় একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও তার চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। সকল নিয়ম মেনেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা করি, কিন্তু একপর্যায়ে তিনি ছুরি নিয়ে নিজে সুইসাইড করার হুমকি দেন, জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলেন এবং এক পা বাইরে দিয়ে লাফ দেয়ার হুমকি দেন। এমনকি তার স্ত্রীকেও ফেলে দেয়ার হুমকি দেন। পরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আটক করা হয়নি, কিন্তু আমাদের অভিযান চলমান আছে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আদম তামিজী হক-এর পরিচিতি
আদম তামিজী হক ১৯৭৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার ইস্কাটন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা এ.টি. হক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তমিজুল হক ও মাতা নাম ইয়াসমিন হকের একমাত্র ছেলে। তমিজুল হক ভারতের আসামের বাসিন্দা হলেও দেশভাগের আগেই ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।৯ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমান লন্ডনে। তার স্কুল জীবনের বেশিরভাগ সময় ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে কেটেছে। ১৬ বছর বয়সে তিনি বোর্ডিং স্কুল ছেড়ে লন্ডনের একটি টিউটোরিয়াল কলেজে যান। পরবর্তীতে অল্প কিছুদিন তানজানিয়ার জানজিবারে থাকার পরে তিনি উত্তর ইংল্যান্ডের হাডারসফিল্ডে যান। সেখানে হাডারসফিল্ডের হিলটন হোটেলে কাজ করার আগে ক্যাটারিংয়ের একটি কোর্স করেন। ১৮ বছর বয়সে পারিবারিক ব্যবসায় হাল ধরতে তিনি দেশে ফিরে আসেন। আদম তমিজী হক যুক্তরাজ্যের মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

ব্যবসায়িক জীবন
আদম তামিজী হকের পিতা ও হক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রয়াত ব্যারিস্টার তমিজুল হক ২০০২ সালে যখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন বন্ধ করে দেন তখন দেশের বিস্কুট, কনফেকশনারি, ওয়েফার, সাবান এবং ব্যাটারি প্রস্তুত এবং বিপনণকারী প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে অচল হয়ে পড়ে। আদম তামিজীর কথায়, বলা যায় প্রায় দুই বছরের বিক্রির সমান টাকার ঋণ ছিল আমাদের। এক কথায় বলা চলে ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। সে সময়ে ১৮ বছর বয়সে তিনি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। তখন তিনি শুধুমাত্র শুষ্ক কোষ এবং সাবানের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে তিনি হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১১ সালে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হওয়ার পরে নিজেকে বিস্কুট ব্যবসার সাথে জড়িত করেছেন।

২০১৯ সালে কুটির শিল্প শ্রেণীতে মেসার্স হক ড্রাইসেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় তাকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচন করেছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
আদম তামিজী হক শিল্প উদ্যোগ ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি মানবিক বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা গঠন করেছেন। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ রক্ষা এবং রাজধানী ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য শহর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনা, চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে।

আদম তমিজী হক ২০১৭ সালে রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর তাতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। পরে নিজ সরকার বিরোধী কার্যকলাপ এবং দলীয় শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

উল্লেখ্য আদম তমিজী হক আওয়ামিলীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও তার চাচার বিরুদ্ধে হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা সহ একহাজার কোটি টাকা সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে