শেখ হাসিনার পতন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শিক্ষা

ফাইল ছবি

এম. বি. আলম: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে একটি গণজাগরণ, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। যদিও এই আন্দোলনের সূত্রপাত শিক্ষার্থীদের দ্বারা, কিন্তু এর পরিণতিতে পুরো দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।

শুরুতে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীর জন্য বরাদ্দকৃত কোটার সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।

২০১৮ সালেও একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিল, যার ফলে শেখ হাসিনা সমস্ত কোটা বিলুপ্ত করেছিলেন। কিন্তু এ বছরের জুন মাসে হাইকোর্ট পুনরায় কোটাকে বহাল করে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং আন্দোলনের সূচনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্রমেই তীব্র রূপ নেয়, বিশেষ করে যখন শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়, ফলে দেশজুড়ে হাসিনার পতনের দাবি ওঠে। আন্দোলন দ্রুতই গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়, এবং সরকারের কঠোর দমননীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগে প্রায় বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় ৩২ শিশুসহ ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিক্ষার্থী।

মূলত এ থেকেই আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের তোপে এক মাস পরে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রেখে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

ফাইল ছবি

তবে এই রায়ের আগেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কেননা শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বিতর্কিত একটি মন্তব্য করেন।

শেষ পর্যন্ত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন, যা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের একটি করুণ পরিণতি হিসেবে চিহ্নিত হয়। শেখ হাসিনা, যিনি এক সময় লৌহমানবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তার পতনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল তার স্বৈরাচারী শাসননীতি এবং ভিন্নমতের দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের নীতি।

বিশ্বের জন্য এই ঘটনার শিক্ষা হলো, উন্নয়ন যতই হোক না কেন, জনগণের স্বাধীনতা হরণ করলে শাসকের পতন অনিবার্য। শেখ হাসিনার করুণ পরিণতি এটাই প্রমাণ করে যে, স্বৈরশাসন কোনো টেকসই সমাধান নয়, বরং এটি শেষ পর্যন্ত শাসকের জন্য একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনে।