শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগ: ক্ষমতা ছাড়ার নেপথ্যের নাটকীয় ঘটনা

ফাইল ছবি

টুইট ডেস্ক: সোমবারের (৫ আগস্ট) দিনটি বাংলাদেশে এক নাটকীয় মোড় নিয়েছিল, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এই প্রভাবশালী নেত্রীর এইভাবে পালিয়ে যাওয়ার খবরটি অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত।

রবিবার রাতে এবং সোমবার সকালে (৪ ও ৫ আগস্ট), দেশজুড়ে নানা ঘটনার মধ্যে শেখ হাসিনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আভাস পাওয়া যায়। রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাকে জানান, যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তিনি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দেন যে, এটি আর সম্ভব নয়।

রবিবার রাতেই শেখ হাসিনা পদত্যাগের কথা ভাবতে শুরু করেন, যা পরে নিশ্চিত করেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সোমবার সকালে তিনি তিন বাহিনীর প্রধান এবং পুলিশ প্রধানের সাথে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।

সোমবার সকাল ১১টার মধ্যে শেখ হাসিনা গোপনে গণভবন ত্যাগ করেন এবং হেলিকপ্টারে করে আগরতলা পৌঁছান। সেখান থেকে ভারতের বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে চেপে দিল্লি পৌঁছান তিনি এবং তার বোন শেখ রেহানা।

তবে এই সময় শেখ হাসিনা তার কাছে দুটি বিকল্প খোলা রেখেছিলেন-বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং দেশ ত্যাগ করা। কিন্তু সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আরও হতাহতের আশঙ্কা বিবেচনা করে, অবশেষে তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার মাধ্যমে তার গতিবিধি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। পরে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয় যখন তিনি হেলিকপ্টারে ওঠেন। সেই দিন সকালেই পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সাথে আলোচনা করেন এবং তার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি করানো হয়।

ভারতের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে বাংলাদেশের হেলিকপ্টারে করে তিনি যদি ভারতের আগরতলায় পৌঁছাতে পারেন, তাহলে সেখান থেকে তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে করে শেখ হাসিনাকে সোমবার দিল্লি হিন্ডোন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত, পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ ও নিরাপত্তার কারণে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, যদিও তিনি কখনোই নিজে থেকে দেশ ছাড়তে চাননি বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে বলেন, তার মা দেশ ছাড়তে চাননি। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। সেজন্য তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার কথা জোর দিয়ে বলেন পরিবারের সদস্যরা।

দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, সোমবার সকালে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর প্রধানরা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি করানোর জন্য তার বোন শেখ রেহানার সাথে আলোচনা করেন।

“তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে আলোচনা করেন। তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।