পুলিশবিহীন শহরে বাস চলছে, খুলছে দোকানপাট

টুইট ডেস্ক : সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতা কর্মীদের রাস্তায় কাজ করতে দেখা গেল। আওয়ামী লীগ নেতাদের যেসব ব্যানার সোমবার ছিঁড়ে ফেলেছে মানুষ, সেগুলো ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছিলেন তারা। গণ আন্দোলনে ক্ষমতার পালা বদল, সংঘাত আর আতঙ্ক পেরিয়ে শান্ত এক সকাল দেখল ঢাকা।

রাতের কারফিউয়ের সময় শেষ হয়েছে মঙ্গলবার ভোর ৬টায়। সকাল থেকে রাস্তায় বাসসহ গণপরিবহন চলতে শুরু করেছে, ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। ছোটাছুটি করছিল সরকারি দপ্তরের গাড়িগুলোও। বড় রাস্তাতেও প্রচুর ব্যাটারি চালিত রিকশা চলছে।

সকালে মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে আগারগাঁও শ্যামলী পর্যন্ত সড়ক ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে কোথাও কোনো পুলিশ নেই।

সকাল সাড়ে ৮টায় মহাখালী রেলগেইটে পথ আগলে দাঁড়িয়ে ছিল বৈশাখী আর রইছ পরিবহনের তিনটি বাস। যাত্রী তুলতে হাঁক-ডাক ছাড়ছিলেন বাস চালকের সহকারীরা।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে চলছিল প্রচুর মোটরসাইকেল। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন মহাখালীর আমতলী মোড়ে। পাশের ইউরেকা ফিলিং স্টেশনে দেখা গেল গ্যাস নিতে আসা যানবাহনের লম্বা সারি।

সেখানে কথা হল ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালক মাহফুজুল হকের সঙ্গে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মাহফুজ জানালেন, সকালে উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে ট্রিপ নিয়ে গুলশানে এসেছেন। এখন একটু তেল ভরে আবার স্ট্যান্ডে দাঁড়াবেন।

তিনি বললেন, রবি এবং সোমবারও সংঘাতের মধ্যে তিনি মোটরসাইকেল চালিয়েছেন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন।

বৈশাখী পরিবহনের হেল্পার মোতাসিম বললেন, “মহাখালীতেই গাড়ি রাখছিলাম। হবায় বাইরাইলাম, গুলশান থেকে মহাখালী আইছি ২৫ জন নিয়া। এইখানে যাত্রী ভালই উঠতাছে।”

মহাখালী পেরিয়ে জাহাঙ্গীর গেইট সিগনালে মহাখালী মুখী যানবাহনের কিছুটা ভিড়, যানজট দেখা গেল। সেখানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দেখা গেল সেনা সদস্যদের।

কিছুদূর এগোতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সামনে অবস্থান নিয়ে ছিলেন সেনা সদস্যরা। তবে আগারগাঁও লিংক রোডে ঢোকার সিগন্যালটিতে কোনো পুলিশ দেখা গেল না।

যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে না কেউ। এপাশ থেকে আগারগাঁওমুখী যানবাহন গুলো দল বেঁধে এগোতে এগোতে জাহাঙ্গীর গেইটমুখী যানবাহনগুলোকে থামিয়ে দিচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ পর জাহাঙ্গীর গেইটমুখী যানবাহনগুলো এপাশের যানবাহনগুলোকে থামিয়ে চলছে।

রাস্তায় দুধবাহী ট্রাক, সবজির ভ্যান, মিনি ট্রাক ছোটাছুটি করতে দেখা গেল। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির স্টাফ বাস ও মাইক্রোবাস চলাচল করছিল।

এক ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক মো. ফারুক বলেন, “এখন তো আমরা ছাড়া আর কেউ নাই মামা। বেশিরভাগ গাড়ি এহনো গ্যারেজে চার্জ দিতাছে। দুপুর হইলে দেখবেন হাজার হাজার রিকশা নামছে।”

সরকারি দপ্তরগুলোর শাটলসার্ভিস চালু রয়েছে। সচিবালায়ে একটি মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক মাইক্রোবাসচালক সুমন শেখ বলেন, গাড়ি চালাতে হবে এমন নির্দেশনা পেয়েছেন গতরাতেই।

সকলেই সরকারি পুল থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন। রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। উত্তরা থেকে শুরু করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বনানী হয়ে এখন সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছেন।

আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স, পঙ্গু ও শিশু হাসপাতালের সামনে মানুষের ভিড়। সকাল থেকেই যথারীতি ভিড় করেছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতা কর্মীদের রাস্তায় কাজ করতে দেখা গেল। আওয়ামী লীগ নেতাদের যেসব প্যানাফ্লেক্স, ব্যানার সোমবার ছিঁড়ে ফেলেছে মানুষ, সেগুলো ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছিলেন তারা।