রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ছুটিতে: শেষে কোথায় যাবেন তা নিশ্চিত নয়

পিটার হাস। ছবি: সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : পিটার হাস তার ছুটিতে কোথায় গিয়েছেন তা এখনো সরকারি সূত্র দ্বারা নিশ্চিত করা হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ফ্লাইট নাম্বার ইউএল ১৯০-এ তিনি শ্রীলঙ্কার কলম্বোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বিমানবন্দর সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি তিনি সৌদি আরব, জর্ডান, এবং সুইজারল্যান্ডে সফর করেছেন যা তার ছুটির অংশ হতে পারে।

পিটার হাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে সরকার অবগত বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন। তিনি বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঢাকায় কর্মরত বিদেশি মিশনপ্রধানেরা যখন স্টেশন ছাড়েন, কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে প্রটোকলকে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) জানিয়ে যান। তাঁদের সদর দপ্তরেও তাঁরা সেটা জানান।

একইভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতেরা দেশে আসার সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানোর পাশাপাশি যে দেশে কাজ করেন, সেখানকার সরকারকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে আসার রীতি রয়েছে। রাষ্ট্রদূতের অবর্তমানে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটাও জানাতে হয়।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পিটার হাস ১৫ নভেম্বর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত মাসের শেষের দিকে অবহিত করেছিলেন। সে জন্যই ২ নভেম্বর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। কারণ, এরপর ৫ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত পররাষ্ট্রসচিবের সৌদি আরব, জর্ডান ও সুইজারল্যান্ডে সফর ছিল।

বাংলাদেশের ক্ষমতাশীন দল, জনগনের আস্তা অর্জন এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সম্প্রতি বির্তকিত গুঞ্জন উঠে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস-কে নিয়ে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন পিটার হাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছে ওয়াশিংটন প্রশাসন। এজন্য তিনি জরুরিভিত্তিতে কলম্বো হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাবেন এমন মতান্তর রয়েছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত পিটার হাস, বাংলাদেশে তার দায়িত্ব পালনে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করতে একটি সার্থক প্রয়াসে মুখোমুখি হয়েছেন। তার সময়ে, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি, সামাজিক অবস্থা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে তার সক্রিয় অংশ নিয়েছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল তার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্পর্কে বলেন ঢাকায় আমাদের দূতাবাসে আমাদের দারুণ একটি প্রতিভাবান টিম রয়েছে; যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত, “যিনি কেবল বাংলাদেশেই নয়, এর চেয়েও বড় অঞ্চলেও কাজ করতে সক্ষম”।

পিটার হাস সাক্ষরতা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশের উন্নতির উপর জোর দেন। পিটার হাস, তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সুদৃঢ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। তার যোগাযোগ ক্ষমতা, সামরিকতা এবং উদারতা তার দায়িত্ব পালনের সময়ে উজ্জ্বল হয়েছে।

এই রকমের ছুটির কারণে আগেই বিদেশি মিশনগুলো জেনেছে এবং তাদের অবস্থান সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছে। এই সময়ে পিটার হাস যদি কোনো নতুন মিশনে দায়িত্ব পান, তাদের কর্মক্ষমতা বা দায়িত্বের তথ্যটি সহীত জানানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছেন।

একনজরে পিটার হাস

২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসকে নিয়োগ করেন। সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের মিনিস্টার-কাউন্সিলর মর্যাদার পেশাজীবী সদস্য মিস্টার হাস ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং একইসাথে অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি বাণিজ্য নীতি ও সমঝোতা বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

মিস্টার হাস অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-এর যুক্তরাষ্ট্র মিশনে শার্জে দ্য ফেয়ার ও ডেপুটি পার্মানেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, ভারতের মুম্বাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কনসুল জেনারেল এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ইকোনোমিক কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি লন্ডন, রাবাত, ওয়াশিংটন, পোর্ট-অ-প্রিন্স ও বার্লিন-এ বিভিন্ন কূটনৈতিক পদে কর্মরত ছিলেন।

পিটার হাস ২০২২ সালের মার্চ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত আছেন। তার প্রয়াসে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে বেশি উন্নত স্তরে নিয়ে গেছেন এবং দুটি দেশের মধ্যে বিশেষ বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে মূল্যবান ভূমিকা পালন করছেন বলে দাবি করা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইডে।

মিস্টার হাস ইলিনয় ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং জার্মান ভাষায় বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে মার্শাল স্কলার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্ব অর্থনীতির রাজনীতি ও তুলনামূলক সরকার উভয় বিষয়ে এমএসসি (অর্থনীতি) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের জেমস ক্লেমেন্ট ডান পুরস্কার এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অর্জন বিষয়ক কর্ডেল হাল পুরস্কার পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতির উন্নয়ন এবং বিদেশী বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহায্য করার জন্য মার্কিন ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রচারে মিস্টার হাসের তিন দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইনী, নিয়ন্ত্রক এবং নীতি পরিবর্তনের জন্য সফলভাবে সমর্থন করেছিলেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টে কর্মজীবনে মিস্টার হাস ওয়াশিংটনে ঊর্ধ্বতন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণী পদে কাজ করেছেন, যার মধ্যে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক নীতি গঠনেও কাজ করেন। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থায় মার্কিন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মিস্টার হাস বর্তমানে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মনে করেন, ফলাফল প্রদানের জন্য একটি বড় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, মরক্কো এবং হাইতিসহ বিভিন্ন দেশে বাস করেছেন এবং কাজ করেছেন।