রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের ভাঙচুর, নেতাদের মারধর
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় ৭ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। শনিবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ কমিটির ঘোষনার পরের দিন রোববার দুপুরে পদবঞ্চিতরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে ও নয়া কমিটির সভাপতির অনুসারি নেতাদের মারধর। এ সময় তারা নব-ঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এছাড়াও মাদার বখশ হলে নব ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিবের কক্ষে ভাঙচুর চালায় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এতে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাবি ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনের প্রায় একমাস পর গত শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সংলগ্ন ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে এসে জড়ো হয় পদবঞ্চিত নেতা ও তাদের সমর্থক-কর্মীরা। সেখান থেকে নয়া কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। যাদের মধ্যে ছিলেন, পূর্বের কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বণি ও সাকিবুল হাসান বাকি। এদের মধ্যে সরকার ডন ও দুর্জয় নতুন কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে কাজী লিংকন, সরকার ডনসহ পদবঞ্চিতরা সাধারণ সম্পাদক গালিবের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পরে বেলা ১২টা দিকে পরিবহন চত্ত্বরে নতুন সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী ও পূর্বের কমিটির সহসম্পাদক আরব হোসেনকে মারধর ও ধাওয়া দেয়া হয়। গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই তাকে মারধর করেন কাজী লিংকন। এসময় সাকিবুল হাসান বাকিসহ অন্য পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
নতুন সাধারণ সম্পাদক গালিবের কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী লিংকন ও সরকার ডন বলেন, আমরা ওই হলে (মাদার বখশ) শান্তিপূর্ণভাবে গিয়েছিলাম। কিন্তু কক্ষ ভাঙচুরের সাথে আমরা জড়িত নই। এটা সাজানো নাটক। ওরাই এখন ভাঙচুর করে আমাদের নামে অভিযোগ দিতে পারে। গালিব বিয়ে করে রাজশাহীতে শ^শুরবাড়িতে থাকে। সে কিভাবে নেতা হয়?
সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সরকার ডন আরও বলেন, আমরা এখন রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি। ওদেরকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দিব না। সেটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বুঝবে, কমিটি বিলুপ্ত করে দিবে। কুষ্টিয়াতে হয়েছে, চট্টগ্রামে হয়েছে। সভাপতি-সেক্রেটারি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পারেনি। আমরাও ঢুকতে দিবো না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে আমরা চাপে রাখবো। আমরা এই কমিটির বিলুপ্তি চাই।
রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, নতুন এই কমিটিকে বিশ্ববিদ্যায়ের সর্ব স্তরে নেতাকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু কতিপয় নেতা ও কর্মী কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত করার কেউ নন। নির্বাচনের বছরে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে আমরা সেটা শক্ত হাতে প্রতিহত করব।
এদিকে, ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থানে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এই সুযোগে সরকার বিরোধী পক্ষ ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরী করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এইটাকে তৃতীয় শক্তি সুন্দরভাবে কাজে লাগাবে। তারা তো এটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। ছাত্রলীগের পক্ষের অবস্থান নিয়ে তারা ফায়দা লুটবে এবং ইন্ধন দিবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এবং সেটিই চলছে।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সক্রিয় আছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। তিনি বলেন, হলে ভাঙচুরের খবর পেয়ে আমরা সেখানে গেছি। আমরা দেখছি নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। আমরা তাদের মনিটর করছি। কথা বলার চেষ্টা করছি যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এছাড়া প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে আছে।