ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পক্ষে ফের সরব প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ

টুইট ডেস্ক : দুই বছর পেরিয়ে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ কয়েক মাস আগেই গড়িয়েছে তৃতীয় বছরে। দীর্ঘ এই সময়ে পাল্টাপাল্টি হামলায় হয়েছে হাজারও মানুষের প্রাণহানি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সহায়তায় টান পড়ায় ইউক্রেন এখনও আছে অনেকটাই চাপে।

এমন অবস্থায় ইউক্রেনে সেনা পাঠানো নিয়ে ফের সরব হয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। বৃহস্পতিবার (২ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে স্থল সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি উড়িয়ে দিতে চান না। তার মতে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইন ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে যায় এবং কিয়েভের সরকার তেমন কোনও অনুরোধ করে (তাহলে সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে)।

দ্য ইকোনমিস্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতির মুখে ইউক্রেনকে সমর্থন করে তার আগের বিবৃতিগুলোও পুনরায় নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি রাশিয়ানরা ফ্রন্টলাইন ভেঙে সামনে এগোতে থাকে, যদি (সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে) ইউক্রেনীয় অনুরোধ আসে, যা আজ পর্যন্ত হয়নি, তাহলে আমাদের বৈধভাবে নিজেদেরকে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে হবে।’

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেই মন্তব্যের পরে অবশ্য পশ্চিমা মিত্রদের অনেকেরই সমর্থন পাননি তিনি।

আল জাজিরা বলছে, এই বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে পশ্চিমা সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি বাতিল না করার বিষয়ে করা সেই মন্তব্যে তিনি অটল আছেন কিনা জানতে চাইলে ম্যাক্রোঁ বলেন: ‘অবশ্যই। আমি যেমন বলেছি, আমি কোনো কিছু বাতিল করছি না, কারণ আমরা এমন একজনের মুখোমুখি হচ্ছি- যে কোনো কিছুই বাতিল করছে না।’

ফরাসি এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিসহ এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে আগ্রাসী হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমার একটি স্পষ্ট কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে: রাশিয়া ইউক্রেনে জিততে পারবে না।’

দ্য ইকোনমিস্টকে তিনি বলেন, ‘যদি ইউক্রেনে রাশিয়া জয়ী হয়, তাহলে ইউরোপে কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। কে বলতে পারবে যে, রাশিয়া সেখানেই থেমে যাবে? অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ মলদোভা, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং অন্যান্যদের জন্য তখন কী নিরাপত্তা থাকবে?’

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

যদিও এই বিষয়ে এখনও ঐক্যমত হয়নি বলেও সেসময় জানান তিনি। সেই মন্তব্যের পরে অবশ্য পশ্চিমা মিত্রদের অনেকেরই সমর্থন পাননি তিনি। তবে তার মন্তব্যে সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বেশ দ্রুতই ইউক্রেনে জার্মান বা জোট বাহিনী মোতায়েনের কথা অস্বীকার করেছিলেন। তিনি অবশ্য বরারবই ন্যাটোকে রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘাতে টেনে আনার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠাবে না। তবে কয়েকদিন আগে দীর্ঘ বিলম্বিত ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা পাঠাতে সম্মত হয়েছে দেশটি।

এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আরও অস্ত্র সরবরাহ, সৈন্যদের প্রশিক্ষণ এবং সামরিক সহায়তায় ৩ বিলিয়ন ইউরো পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফ্রান্স। রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, জোটের ইউরোপীয় সদস্যরা ইউক্রেনে যুদ্ধে তাদের সৈন্য পাঠালে ন্যাটোর সাথে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে।