৬১ ভরি স্বর্ণাংকার ও ৭ লক্ষাধিক টাকাসহ ৩৬ সিঁদেল চোর গ্রেফতার: ডিএমপি

টুইট ডেস্ক: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধারসহ সিঁধেল চোর চক্রের ৩৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৬১ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ঈদের আগে ও পরে ঢাকা মহানগরীতে কয়েকটি সিঁদেল চুরির ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর অজ্ঞাতনামা চোরদের গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে ডিবি’র প্রতিটি বিভাগ। অভিযানে ৩৬ জন গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

তিনি বলেন, গত ০৮ এপ্রিল ওয়ারী থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৮ মার্চ হতে ০৭ এপ্রিল যে কোন সময় ওয়ারীর অভয়দাস লেনের একটি বাড়ির ২য় তলার ফাঁকা বাসার গ্রিল কেটে প্রবেশ করে ৩৩.৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩০০ ডলার চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাতনামা চোরেরা। ক্ল’লেস এই চুরির মামলাটি রুজু হওয়ার পর মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিমে হস্তান্তর করা হয়। টিম লিডার মো. ইলিয়াছ হোসেন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে ওয়ারী জোনাল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চোরদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

পরে বাগেরহাটের মংলা থানার পশুর নদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মো. মোবারক ওরফে মগাকে গ্রেফতার করে। তার তথ্য থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। ডিবির ধারাবাহিক অভিযানে নেত্রকোনা জেলা থেকে মো. রাকিব মিয়াকে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকার বিক্রির ৪০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দুজন বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরোও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার দিন হেক্সো ব্লেড দিয়ে বাসার বেডরুমের পিছনের গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে স্বর্ণলংকার ও ডলার চুরি করে। চোরাইকৃত স্বর্ণগুলো মোবারক ও রাকিব বিভিন্ন সময়ে চুরি করে টিকাটুলির হুমায়ুন সাহেবের গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. শেখ ফরিদের নিকট ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে।

পরে স্বর্ণালংকার ও ডলার বিক্রির টাকা দিয়ে মোবারক ও রাকিব তাদের আরো আটজন বন্ধু মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যায় এবং নেশা করে। মোবারক তার গার্লফ্রেন্ডকে একটি মোবাইল ফোন গিফট করে। মো. শেখ ফরিদ স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে চোরাই স্বর্ণ কেনা-বেচার সাথে জড়িত। অভিযুক্ত শেখ ফরিদকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় তার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকারের গলিত ২০ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের পাত উদ্ধার করা হয়।

মামলাটি তদন্তকালে আরো দুজন পেশাদার চোর মো. ডালিম ও মোঃ সাদ্দাম হোসেন বনিকে চুরিতে ব্যবহৃত হেক্সোব্লেড ও ড্রিল মেশিনসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দুজনের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি মামলাসহ মাদক মামলা রয়েছে।

সংবাদ কমীদের আরোও জানানো হয়, ধানমন্ডির একটি বাসায় গ্রিল কেটে চুরির ঘটনায় ১৯ এপ্রিল ধানমন্ডি মডেল থানায় অপর একটি মামলা রুজু হয়। এসময় ৪১ ভরি ও নগদ ৩৭ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়া যায়।

মামলা তদন্তের সময় গোয়েন্দা রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিম গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। এরপর ২৬ এপ্রিল অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ফজলে এলাহীর নেতৃত্বে ঢাকাসহ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনায় জড়িত মোঃ গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লুন্ঠিত ৪১ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৭ সাত লক্ষ টাকা ও চুরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।

এছাড়াও, সিঁদেল চোরদের গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি-মতিঝিল বিভাগ ১৪ জন, ডিবি-লালবাগ বিভাগ ৩ জন, ডিবি-গুলশান বিভাগ ৩ জন ও ডিবি-মিরপুর বিভাগ ২ জন সিঁদেল চোরকে গ্রেফতার করে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) বলেন, রাজধানীর যেখানেই চুরির ঘটনা ঘটবে তাৎক্ষণিক ডিবি পুলিশ সে সকল ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে নেবে। যদি এ ধরনের কোন তথ্য কারো কাছে থাকে তাহলে নিকটবর্তী থানায় মামলা রুজু করে বিষয়টি গোয়েন্দা বিভাগকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি।