রাজশাহী মেডিকেলে খাবার সরবরাহের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ইকবাল হোসেন এ মামলাটি দায়ের করেন।

বাদীর অভিযোগ, সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে তার দাবি। সব মিলিয়ে এটি প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ। এই মামলায় সোমবার বিবাদী পক্ষের হাজিরার দিন রয়েছে।

অভিযোগকারী ঠিকাদারের ইকবাল হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স মো. আজাদ আলী। গত ২৯ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন ইকবাল হোসেন। তবে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে আজ রোববার।

মামলার আরজিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, উপপরিচালক, কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর ট্রেডিং করপোরেশন, মেসার্স শফিকুল এন্টারপ্রাইজ ও আবদুস সেলিমকে বিবাদী করা হয়েছে। রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত বিবাদীদের ৯ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগ সম্পর্কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সময়ের আবেদন করেন। এ জন্য আদালতে সোমবার ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এদিন তারা আদালতে জবাব দেবেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য পথ্য ও স্টেশনারি সামগ্রী কিনতে গত ২২ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মো. আজাদ আলী পাঁচটি গ্রুপের দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। ২৪ সেপ্টেম্বর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি মৌখিকভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মো. আজাদ আলীর নাম ঘোষণা করে।

কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জানানো হয়, পিজি ৩-১, পিজি ৩-২ ও পিজি ৩-৫ এ অসম্পূর্ণ কাগজপত্র দাখিল, গ্রুপ ‘এ’ এর ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকের কাগজের আসল কপি না দিয়ে ফটোকপি দেওয়া এবং গ্রুপ ‘ডি’ এর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকার কারণে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি মেসার্স মো. আজাদ আলীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে।

এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। গত বছরও এই হাসপাতালের খবার সরবরাহের কাজ পেয়েছিলেন। কী ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয় তিনি ভালো করেই জানেন এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব কাগজই দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার জন্যই তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

ইকবাল হোসেনের দাবি, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়াতে সরকারের অন্তত ২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে। তিনি শুধু খাবার সরবরাহের দরপত্রে অংশ নিয়েছিলেন। স্টেশনারির হিসাব করতে গেলে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এতে শুধু সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, রোগীরাও খাবার কম পাবেন। কারণ, ঠিকাদার বেশি দাম দিয়ে খাবার কিনলে কম পরিমাণই কিনবেন এবং রোগীকে কম পরিমাণেই দেওয়া হবে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মদ বলেন, ঠিকাদারেরা কাজ না পেলে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দাঁড় করান। এটাও তাই। সব নিয়ম মেনে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দরপত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত কিছু ফরম আছে, এই ফরম ফলো করে দরপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু এই ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করেছিলেন। তাই বাদ পড়েছেন। ওই ঠিকাদার মামলা করেছেন। সমন হয়েছে। আদালতে এর জবাব দেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেনকে কার্যাদেশ না দেওয়ার কারণে ২ কোটি টাকার ক্ষতি সম্পর্কে শামীম আহম্মদ বলেন, ‘টোটালি ফলস কথা। আমাদের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ছিল, তারা সব পণ্যের বাজারদর যাচাই করেছে। বাজারদরের চেয়ে কম দরেই পথ্য কেনা হচ্ছে। সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে। যে ঠিকাদার অভিযোগ করছেন, তিনি গতবার কাজ পেয়েছিলেন। আমরা তাকে নিয়ে ভুগেছিলাম। মানসম্মত পথ্য সরবরাহ না করার কারণে আমি কয়েকবার তাকে ডেকে সতর্ক করেছিলাম।’