রাফাহ সমঝোতা বাতিল: বাইডেন ও নেতানিয়াহুর সম্পর্কে ‘‘চরম অবনতি’’

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক: রাফাহ আক্রমণ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুরোধে, ইসরায়েলের প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এটির ফলে, মিত্র দুটি দেশের শীর্ষ দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি নির্দেশ করছে। এ অবনতি রাফাহ আক্রমণের বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা সূচনা হয়েছে, যা এখন আরও গভীরে চলে গেছে।

সিএনএন জানায়, গাজার দক্ষিণ সীমান্ত রাফাহ আক্রমণ নিয়ে এ মতভেদের সূচনা হয় যা বর্তমানে আরও গভীরে চলে গেছে।

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরাসরি টেলিফোন করে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধি দলকে ওয়াশিংটন সফরের অনুরোধ করেন।

কিন্তু সোমবার (২৫ মার্চ ) গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে আমেরিকা ‘ভেটো’ না দিলে প্রতিনিধি দলকে না পাঠানোর হুমকি দেন নেতানিয়াহু।

ওই প্রস্তাবে আমেরিকা ভোট থেকে বিরত থেকে এটি পাস করার অনুমতি দিলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তার দেশের প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটন সফর বাতিল করে দিয়েছেন।

আমেরিকান শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস করার অনুমতি দেয়ার পরে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল সফর বাতিল করার নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে বিভ্রান্ত হয়েছেন।

একজন কর্মকর্তার মতে, হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরে এ পদক্ষেপটিকে একটি বাড়তি প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা হয়েছে যা সম্ভবত নেতানিয়াহুর নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্বেগের প্রতিফলন।

প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি মন্ত্রী গিডিয়ন সার যুদ্ধ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে বর্তমান সরকার থেকে তার পদত্যাগ জমা দেন।

নেতানিয়াহুর সফর বাতিলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাইডেনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। বাইডেন এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নেতানিয়াহুকে ফোন করার কোন পরিকল্পনা নেই বলে জানান কর্মকর্তারা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রায় ছয় মাসের বিরতিহীন আগ্রাসনে গাজার ১.৫ মিলিয়ন বাস্ত্যুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক শরণার্থী হিসেবে ইজিপ্ট সংলগ্ন রাফাহতে বসবাস করছে।

হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি দাবি করে যেখানে বেশ কিছুদিন ধরেই তীব্র স্থল অভিযানের পরিকল্পনার কথা জানায় ইসরায়েল।

কিন্তু এই ধরনের অভিযানের ফলে একটি বিশাল মানবিক বিপর্যয় ঘটবে বলে অ্যামেরিকান কর্মকর্তারা সতর্ক করে আসছেন।

রাফাহতে আক্রমণ করা হলে সেখানে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বলে গত সপ্তাহে জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস।

কামালা হ্যারিস বলেন, ‘‘আমি রাফাহর মানচিত্র দেখে অধ্যয়ন করেছি, এই লোকেদের যাওয়ার কোথাও কোন জায়গা নেই।’’

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে, গাজায় মানবিক সংকট আরও খারাপ হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য অব্যাহত থাকলে এটি একটি আন্তর্জাতিক বড় ধরণের চাপ হয়ে ওঠতে পারে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন রমজানের আগে বেশ জোর দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কিন্তু মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসের অর্ধেক শেষ হলেও গাজায় কার্যত যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ চাপে আছে ইযরায়েল ও অ্যামেরিকা।

গত সপ্তাহের শেষে সেক্রেটারি অফ স্টেইট অ্যান্টনি ব্লিনকেন সঙ্গে বৈঠকের পর নেতানিয়াহু জানান, রাফাহতে প্রবেশ না করে হামাসকে পরাজিত করার কোনো উপায় নেই।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি যে আমি আশা করি আমেরিকার সমর্থনে আমরা এটি করব তবে প্রয়োজন হলে আমরা একাই রাফাহ আক্রমণ করব।’

গাজায় মানবিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর বা রাফাহ আক্রমণের পরিকল্পনা প্রত্যাহার করার কোন ধরনের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই শুক্রবার (২৩ মার্চ ) মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেছেন ব্লিঙ্কেন।

আমেরিকান কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েল যদি রাফাতে আক্রমণ শুরু করে তবে জিম্মি আলোচনা ভেস্তে যাবে।

বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে না নিয়ে পরিকল্পনা ছাড়া রাফাহ আক্রমণের চিন্তা করলে গাজায় মানবিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান আমেরিকান শীর্ষ কর্মকর্তারা।

দুই দেশের নির্বাচনি বছরে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে দ্বৈরথ দুজনকে অভ্যন্তরীণ চাপে ফেলবে বলে অনুমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।