দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় এমপিকে শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিষ্টাচার বহির্ভূত ও সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শোকজ করা হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। গত ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে শোকজ করা হয়।

এমপি আবুল কালাম আজাদকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্যাডে দেয়া ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত আপনার বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে প্রদত্ত আপনার বক্তব্য সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এমতাবস্থায়, আপনার বিরুদ্ধে কেনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার ব্যাখ্যাসহ আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর মাননীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে (বাড়ি-৫১/এ, সড়ক-৩/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা) প্রেরণের জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

পত্রের অনুলিপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজশাহী জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একের পর এক বেফাঁস কথাবার্তা, প্রতিপক্ষের ওপর সহিংস কর্মকান্ড পরিচালনাসহ নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন এমপি আবুল কালাম আজাদ। এবার আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হাইকমান্ড সম্পর্কে তার বিরূপ মন্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে। হয়েছে পত্রিকার শিরোনাম।

গত ১৩ মার্চ বাগমারায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সদ্য নির্বাচিত এমপি আবুল কালাম আজাদ। এ সময় তিনি বলেন,

‘আমাদের নেত্রীও কিন্তু চান সব সময় সবলের পক্ষে থাকতে। আমরা যারা সবল বা মেজরিটি- তারা যেদিকে যাব সেটাই আইন। শেখ হাসিনাও এই যে গত নির্বাচন করলেন এটা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে না। গঠনতন্ত্রের বাইরেও অনেক কিছু প্রয়োজন। প্রয়োজনতন্ত্র আছে একটা। এই প্রয়োজনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত চলব আমরা।’

তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এমপি আবুল কালাম আজাদের একের পর এক অশালীন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নজরে আসে।

আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থেকে সংগঠণের পাশাপাশি দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিকে কটাক্ষ না করে সংগঠন বিরোধী ওই সকল বক্তব্যের কারণে আবুল কালাম আজাদ এমপিকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে আবুল কালাম আজাদ এমপির ওই সকল বক্তব্য আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বক্তব্যের ভিডিওটি এডিট করা বলে দাবি করেছেন এমপি আবুল কালাম আজাদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী বা দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কোন বক্তব্য দেয়নি। পুরো ভিডিও শুনলে তা বোঝা যাবে। আমাকে হেও করতে ভিডিওটি এডিট করে প্রচার করা হয়েছে।’