পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত হচ্ছে
টুইট ডেস্ক: এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে পদ্মা ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে ব্যাংকের পরিষদ সভায় পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকের পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্তের নিশ্চিতি দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের প্রথম স্বেচ্ছায় একীভূতকরণের ঘটনা। এই পরিষদ সভার ফলে পদ্মা ব্যাংক এখন একটি নতুন দিকে নিয়োজিত হচ্ছে।
এটিই হবে দেশের প্রথম স্বেচ্ছায় একীভূতকরণ। এর আগে একীভূত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
এক্সিম ব্যাংকের পরিষদ সভায় একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
আগামী জানুয়ারির মধ্যে একীভূত হতে চাপ দেওয়া হতে পারে অন্তত ১০ ব্যাংককে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এবিবির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিত থাকবেন।
একটি সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ইতিমধ্যেই বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
বিপুল খেলাপি ঋণ, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে না পারা এবং বড় লোকসান দিতে থাকায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে পদ্মা ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু পদ্মা ব্যাংককে যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ (মার্জার) বা অধিগ্রহণ (অ্যাকুইজিশন) করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দেন।
আইসিবির পরিচালনা পর্ষদের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটি দ্বিতীয় ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ হিসেবে বিনিয়োগ বা মার্জার অথবা অধিগ্রহণের উপযোগী হতে পারে।
ব্যাংকের মূলধনের সহায়তার জন্য দেশি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারী সন্ধান করা হবে।
সভায় উপস্থিত একটি সূত্র আরও জানিয়েছে, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ইতিমধ্যেই বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবে বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এই বিষয়ে এখনও কোনো চিঠি পাননি।
এক্সিম ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও পদ্মা ব্যাংক নেই।
কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংক মালিকদের বলেছিলেন তারাই যেন সিদ্ধান্ত নেন কোন ব্যাংক কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে। ব্যাংকগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে কে কার সঙ্গে একীভূত হবে।
দ্য ফারমার্স ব্যাংক নামে ২০১৩ সালে ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৭ সালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। কিন্তু শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। ব্যাংকটিকে বাঁচাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশান অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়।
সার্ব-অডিনেট বন্ড জারি ও স্থায়ী আমানত রাখার মতো অন্যান্য সহায়তার আকারেও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
কিন্তু পদ্মা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় সহায়তা দিয়েও ব্যাংকটির মূলধন ক্ষয় ঠেকানো যায়নি।
এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। বলা হয়, ব্যাংকটিতে ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ আনতে ডেল মরগান মধ্যস্থতা করবে। কিন্তু সেই অর্থও কখনো আসেনি।
এদিকে বিনিয়োগ করে পাঁচ বছর পরেও কোনো রিটার্ন না পাওয়ায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা ব্যাংক থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় আইসিবি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থাটি এখন তাদের পদ্মা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির জন্য দেশি-বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছে।
সে সময় আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকটি মুনাফা করলে যেন তার অংশ পাওয়া যায়, সেজন্য আমরা ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করি। কিন্তু এত দিনেও পদ্মা ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে কোন রিটার্ন পাইনি। এ কারণেই আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ঋণ থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।