বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে

বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

টুইট ডেস্ক: বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা আগের মাস ডিসেম্বর থেকে ০ দশমিক ১৮ বেসিস পয়েন্ট কম। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা তার আগের ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১০ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গত দুই বারের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে এবং এর প্রভাবে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার প্রতি মাসেই বাড়ছে। এছাড়া পলিসি রেটও একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে যা ব্যাংকের কষ্ট অব ফান্ড বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

ব্যাংকাররা আরও জানান, দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গত এক বছর ধরে তারল্য সংকট রয়েছে এবং এসব ব্যাংক নিজেরা তারল্য সংকটে থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিয়েছে যার কারণে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ, এরপর থেকে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দুটি মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ সরবরাহ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমিয়েছে। বাজারে এর প্রভাব বাড়াতে রেপো রেটও ব্যাংকগুলোকে ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কয়েক বার বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর কষ্ট অব ফান্ডও বেড়ে যাচ্ছে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক বার রেপো রেট বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে রেপো রেট ছিল ৬ শতাংশ, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সব অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নিম্নমুখী করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা প্রথমার্ধে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া ব্রড মানি সাপ্লাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশের আমদানির পরিমাণ অনেক কমে যাওয়া। সাধারণ ব্যবসায়ীদের আমদানির বিপরীতে ব্যাংকগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোন থাকে, এসব ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ কমছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, আমদানির বিপরীতে ব্যবসায়ীদের বড় ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। এ ঋণপ্রদানের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ দেশের মোট আমদানি ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ কমে ৬৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছর ৮৬ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার ছিল। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, মূল্যস্ফীতিই আমাদের মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ডলার-সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেওয়ায় গত বছর আমদানি কমেছে ২১ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে বিনিয়োগে মন্দা দেখা দিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে ফেলেছে।