নারীর অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিলে তারা সব পারবে: প্রধানমন্ত্রী

টুইট ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সব সময় চাইতেন নারীরা এগিয়ে থাকুক। নারীদের যাতে শিক্ষা খাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়, তাই তিনি নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা দেন।

শুক্রবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জয়িতা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে যখন আমি ক্ষমতায় আসি তখন দেখলাম উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারপতি নেই। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে উচ্চ আদালতে নারী বিচারক নিয়োগ দেয়। ইচ্ছা ছিলো প্রধান বিচারপতি করার, কিন্তু হয়নি। এভাবেই দুয়ার খুলে দিলাম। সবচেয়ে বাধার মুখে পড়েছিলাম নারীদের এসপি করার সময়। মেয়েদের সুযোগ দিলে পারবে না, এটা আমি মানতে রাজি না। মেয়েদের অর্থনৈতিক মুক্তি সবচেয়ে বড়। অর্থাৎ, নারীর অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিলে তারা সব পারবে।

তিনি আরও বলেন, নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে সরকার। এভারেস্ট জয়, খেলাধুলাসহ প্রতিটি জায়গায় দেশের মেয়েরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে, সরকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা সবচেয়ে বড়। প্রাথমিকে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে নারীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে।

এসএমইতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। নারীরা যাতে উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে ওঠে সেজন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। সরকার চায় নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত হোক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকে দুই জন নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও নারীদের দক্ষতা প্রমাণ করতে চায় সরকার। ঘরের কাজ হিসাব করলে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি কাজ করে। নারীরা কখনো পিছিয়ে থাকবে না এটাই প্রত্যাশা। দলের ঘোষণাপত্রে, নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যেখানে নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সমানতালে কাজ করলেই এগিয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রশাসন থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী- কোথাও মেয়েদের সুযোগ ছিল না। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সেই সুযোগ করে দিয়েছি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নারীরা সবচেয়ে বেশি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তারাই সুনাম বয়ে আনছেন বাংলাদেশের।

তিনি বলেন, জাতির পিতা নারীদের প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ঘোষণা করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে নারীরা আজ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে সব যায়গায় নারীরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

এ সময় শেখ হাসিনা তার মায়ের বিচক্ষণতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা রাজনীতি করতেন। তিনি বেশিরভাগ সময়ই জেলে থাকতেন। এ সময় তার কাজগুলো গোপানে আমার মা করতেন। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাও আমার মাকে ধরতে পারেনি। আমার মা নিজের পোশাক পরিবর্তন করে গোপনে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে দেখা করতেন, পরামর্শ দিতেন- সে বিষয়টি ধরতে পারেনি। এতোটাই দক্ষ-বিচক্ষণ ছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ওই সময়ের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন দেখেছি; কিন্তু কোথাও আমার মায়ের বিষয়টি নেই। তবে আগরতলা মামলা যখন দেয়া হয়, তখন তারা মাকে টার্গেট করে, বুঝতে পারে। গ্রেফতার করার একটা শঙ্কা তৈরি হয়।

এর আগে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫ নারীকে জয়িতা সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা পাওয়া পাঁচ জয়িতা হলেন- ময়মনসিংহের আনার কলি, রাজশাহীর কল্যাণী মিনজি, সিলেটের চা শ্রমিক কমলী রবিদাশ, বরগুনার জাহানারা বেগম ও খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া। প্রত্যেক জয়িতাকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।