ডায়েট সফট ড্রিংক মিষ্টি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়: গবেষণা

প্রতীকী ছবি

টুইট ডেস্ক: নতুন একটি গবেষণা দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে কৃত্রিমভাবে মিষ্টি যুক্ত সফট ড্রিংক দুই লিটার বা তার বেশি পান করা হলে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন নামক একটি অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়ায়। অন্যদিকে, কমলা বা সবজির রসের মতো চার আউন্স পানীয় পান করলে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের ঝুঁকি ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

স্বাস্থ্য সম্পর্কে এই গবেষণা আসলে মিষ্টি যুক্ত সফট ড্রিংক প্রবণতা নিয়ে কথা বলছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকিতে বাড়ায় বলে দেখা গেছে। এটি অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন নামে একটি অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ঝুঁকির বিষয়ে।

অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন রোগটি এ-ফিব নামেও পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই অনিয়মিত এই হৃদস্পন্দনকে বুকের মধ্যে কাঁপাকাঁপি, ফ্লিপ-ফ্লপ বা অস্বস্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ওই পরিমাণ চিনিযুক্ত পানীয় পান করলে এই লক্ষণগুলোর ঝুঁকি ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। অন্যদিকে কমলা বা সবজির রসের মতো চার আউন্স পানীয় পান করলে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের ঝুঁকি ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

পেনসিলভেনিয়া স্টেইট ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক পেনি ক্রিস-ইথারটন বলেন, ‘অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের উচ্চ ঝুঁকির সঙ্গে ক্যালরিবিহীন বা কম ক্যালরিযুক্ত মিষ্টিকারক ছাড়াও চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয়ের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।’

জেনেটিক সংবেদনশীলতাও এই হৃদরোগটি তৈরিতে প্রভাব ফেলে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে উত্তরাধিকারসূত্রে ইউরোপিয়ান বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি ২২ শতাংশ।

ক্রিস-ইথারটন বলেন, ‘ফলাফলগুলো সম্পর্কে ও হৃদরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমাদেরকে এই পানীয়গুলো নিয়ে আরও পরীক্ষা চালাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পানিই সর্বোত্তম বিকল্প। ক্যালরিবিহীন ও কম ক্যালরিযুক্ত পানীয়গুলোর প্রাপ্যতা সীমাবদ্ধ করা উচিত বা এগুলোকে এড়িয়ে চলা উচিত।’

আমেরিকায় বর্তমানে স্ট্রোকের প্রধান কারণ হলো অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন। এছাড়াও ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, এ-ফিব এর কারণে হওয়া স্ট্রোকগুলো অন্যান্য কারণে হওয়া স্ট্রোকের তুলনায় মারাত্মক হয়ে থাকে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার মেডিসিনের অধ্যাপক গ্রেগরি মার্কাস এর আগে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন রোগটি রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট ফেইলিওর, ডিমেনশিয়া ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

‘হার্ট রিদম সোসাইটি জানিয়েছে, অ্যামেরিকায় ৬ মিলিয়নসহ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে আক্রান্ত।’

‘আক্রান্তদের বেশিরভাগই বুক ব্যথা, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তিতে ভোগেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই এ-ফিব লক্ষণহীন নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে। শনাক্ত করা গেলে যথাযথ ওষুধ, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা সম্ভব।’

আমেরিকায় এ-ফিব আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সিডিসি অনুমান করছে, ২০৩০ সালের মধ্যে অ্যামেরিকায় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ মিলিয়ন হয়ে যাবে।

মার্কাস বলেন, ‘বয়স অন্যতম একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। তাই মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে।’

এছাড়াও স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ধূমপান ও অ্যালকোহল পান আ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে আক্রান্ত হওয়াতে ভূমিকা পালন করে।

এই অবস্থায় পানি সর্বোত্তম বিকল্প হতে পারে। ক্যালরিবিহীন ও কম ক্যালরিযুক্ত পানীয় বা চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয়ের প্রাপ্যতা সীমাবদ্ধ করা বা এগুলোকে এড়িয়ে চলা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন রোগের উচ্চ ঝুঁকির সাথে ক্যালরিবিহীন বা কম ক্যালরিযুক্ত মিষ্টি পানীয়ের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা হয়েছে, যা বুদ্ধিমত্তার অনুসারে মানুষের স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।