কারা থাকছে ভোটে মাঠে
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন বাকি তফশিল ঘোষণাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা। তফশিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে থাকে নির্বাচন কমিশন। আগামী সপ্তাহে এ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা এবং জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলগুলোও। তবে কোন কোন দল থাকছে ভোটের মাঠে তা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালচনা। আগে থেকে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো ভোটে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। ফলে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এর শরিকেরাও এখন আর খুব একটা চাইছে না যে বিএনপি নির্বাচনে আসুক।
এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলটির বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক অভিযান চলছে, তা সঠিক মনে করছে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা। ক্ষমতাসীন জোটের শরিকেরা বলছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলে আসছে বিএনপি। এর সঙ্গে এখন গ্রেপ্তার অভিযানসহ সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে বিএনপির নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক চাপের অর্থ হচ্ছে, দলটির আর নির্বাচনে আসার সুযোগ নেই। আলোচনার পথও বন্ধ। এখন অন্য দলগুলোর মধ্যে যত বেশি সম্ভব দলকে নির্বাচনে আনা এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর ওপরই জোর ক্ষমতাসীনদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির ওপর সর্বাত্মক চাপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ আনতে পারে। এর দায় আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিকদের ওপর বর্তাবে। এমনকি ভোটের ফল নিয়েও বিতর্ক তৈরি হতে পারে। এরপরও বিএনপির ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে সরকার।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও শরিকদের মধ্যে এমন আলোচনাও রয়েছে যে বিএনপির শক্তি অক্ষত রেখে দলটিকে আবার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেওয়া হলে, সেটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এ জন্যই আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক কঠোর হয়েছে বিএনপির ওপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপিকে চাপে রেখে এখন সময়মতো ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই। বরং চ্যালেঞ্জ আছে ভোটের পর। এমনিতেই অর্থনীতি চাপে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। একতরফা ভোটের দায়ে পশ্চিমারা কোনো ধরনের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিলে সমস্যায় পড়তে হবে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে বিএনপিই নির্বাচনে আসতে চায় না। নতুবা তারা হঠাৎ কেন জ্বালাও-পোড়াওয়ে যাবে?’’
তিনি বলেন, ‘‘ভোটে বিএনপি না এলেও অন্য অনেক দল অংশ নেবে।’’
এই ভোট নিয়ে বিতর্ক কিংবা সরকারের বৈধতার প্রশ্ন আসতে পারে কি না, জানতে চাইলে আমির হোসেন সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আগে ভোট হোক। এরপর বোঝা যাবে। ভোট সুষ্ঠু হবে। ফলে প্রশ্ন থাকবে না।’
২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর অধিকাংশ দল একই পথে হাঁটে। ১৫৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নিবন্ধিত সব দল এবং অন্যান্য অনিবন্ধিত দলও অংশ নেয়। এবার বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো ভোট বর্জন করলে সেই নির্বাচনে কটি দল অংশ নেয়, এ বিষয়ে সংশয় আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন চায় না ক্ষমতাসীনেরা। এ জন্য বেশি বেশি দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে চায় এবার। এর জন্যও প্রয়োজন অনেক দলের অংশগ্রহণ। এমনকি বিএনপি থেকেও নেতাদের ভাগিয়ে এনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
তবে দিন যত যাচ্ছে, ভোট নিয়ে বিএনপির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও অনীহা দেখা যাচ্ছে। ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডাকে। ৪৪ দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৮টি দল তাতে সাড়া দেয়নি। ২৬টি দল ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসেছিল।
রাজনীতিবিদরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপে বিএনপি রাজপথে টিকবে না, এটা জানাই ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের মূল ভাবনা এখন মূল্যস্ফীতি ও নির্বাচনের পর অর্থনীতির গতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে। অর্থাৎ মূল চ্যালেঞ্জটা ভোটের পরই আসতে পারে বলে মনে করেন তারা।
তাদের মতে, ভোটের পর কয়েকটি বিষয় খুব জরুরি। ২০১৪ সালের একতরফা ভোটের পর একের পর একটি প্রভাবশালী দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ত্বরিত অভিনন্দন জানিয়েছিল। এটাকে একধরনের সরকারের বৈধতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। একইভাবে ২০১৮ সালের ভোটের পরও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়নি। কিন্তু এবার প্রথমে প্রভাবশালী দেশের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ভোটের আগেই চাপে রাখছে আওয়ামী লীগকে। ভোটের পরও হয়তো তারা চাপ অব্যাহত রাখতে পারে। এমনকি অর্থনৈতিক নানা চাপও আসতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে, এটা আওয়ামী লীগ মেনেই নিয়েছে। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন দলটি। নির্বাচন হয়ে গেলে এবং সরকার গঠনের পর এ বিষয়ে করণীয় ও কৌশল ঠিক করবে তারা। এমন বিবেচনা থেকে বিএনপিকে চাপে রেখেই নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা।