ভোট বাতিলের আবেদন করে লাপাত্তা, জরিমানা ৫ লাখ

টুইট ডেস্ক : পাকিস্তানে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন বাতিল চেয়ে করা পিটিশনের নিষ্পত্তি করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এই আবেদনে নির্বাচন বাতিলের পাশাপাশি দেশটিতে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছিল।

তবে আবেদন জানিয়ে আদালতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় আবেদনকারীকে ৫ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট বুধবার গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিল ও পুনঃনির্বাচন চেয়ে করা আবেদনের নিষ্পত্তি করেছে এবং আদালতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে ৫ লাখ রুপি জরিমানা করেছে।

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আবেদনের নিষ্পত্তি করে। বিচারপতি আলী মাজহার এবং বিচারপতি মুসাররাত হিলালিও এই বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

কথিত কারচুপির দায়ে নির্বাচন বাতিল এবং পুনরায় নির্বাচনের আবেদনের বিষয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের এই বেঞ্চ এদিন পিটিশন দায়েরকারী ব্রিগেডিয়ার (অব.) আলী খানের আবেদনের শুনানি পরিচালনা করে। তবে পিটিশন দায়েরকারী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না এবং এই কারণে আদালত তাকে এই জরিমানা করে।

জিও নিউজ বলছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), জামায়াতে ইসলামী এবং জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ)-সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই দেশটির সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এছাড়া নির্বাচনে কারচুপির বিষয়ে রাওয়ালপিন্ডি বিভাগের সাবেক কমিশনার লিয়াকত চাতার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার ঘটনায় নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ আরও বেড়েছে।

তার এই স্বীকারোক্তি পাকিস্তানজুড়ে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করে। আর এরই জেরে ওঠে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি।

গত শনিবার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা ওই শহরে ভোট জালিয়াতির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি নিজের ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারও দাবি করেন।

লিয়াকত আলী দাবি করেন, রাওয়ালপিন্ডিতে ১৩ জন প্রার্থীকে জোর করে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, এমন প্রার্থীকেও ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী ঘোষণা করেছি আমরা।’

এদিকে বুধবার আদালতে শুনানির সময় নির্বাচন বাতিলের আবেদনকারীর পরিচয় জানতে চান পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি। এসময় আদালতকে জানানো হয়, আবেদনকারী একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা যিনি ২০১২ সালে কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

পরে আদালত জানায়, ‘কোর্ট মার্শাল হওয়া কোনও ব্যক্তি যাতে ব্রিগেডিয়ার পদ ব্যবহার না করেন তা নিশ্চিত করা উচিত রাষ্ট্রের।’

আবেদনকারীর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টার বিষয়ে আদালতকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আলী খানের বাড়িতে কেবল পুলিশই পাঠানো হয়নি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে একটি নোটিশও পাঠানো হয়েছিল।

দেশের বাইরে থাকার বিষয়ে সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তার ইমেইলের ব্যাপারে মন্তব্য করার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই আবেদনকারীকে দেখুন (যিনি) আদালতে আবেদন দাখিল করার পর দেশ ত্যাগ করেছেন। আমি আগে কখনও এমনটি দেখিনি।

কাজী ফয়েজ ঈসা এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

এদিকে কয়েকদিনের টানা আলোচনার পর পাকিস্তানে সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।

সমঝোতা অনুযায়ী, ফের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন পিএমএল-এনের শেহবাজ শরিফ। অপরদিকে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হবেন পিপিপির আসিফ আলী জারদারি। আর এটিকে পাকিস্তানের গণমাধ্যম পিডিএম ২.০ বলে অভিহিত করেছে।