শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে বাবা-মায়ের ভোট চাইলেন এমপি
নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আর সময় আছে প্রায় দুই মাস। ফলে দিন যতই কমে আসছে, রাজনীতির মাঠে ততই সরব হচ্ছেন এমপিরা। তার সভা সমাবেশ করে নিজের পক্ষে জনমত তৈরীর চেষ্টা করছেন।
গত সোমবার দুপুরে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে মাঠে মঞ্চ করে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করা হয়। সেখানে বক্তৃতা করেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শিশু শিক্ষার্থীদেরও বড়দের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে বলেছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমপি বলেন, ‘আর এই পিচ্চিগুলো কী করবে? এদের তো ভোটটোট কিছু নাই।’
শিক্ষার্থীরা তখন কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। তাদের থামিয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘আচ্ছা শোনো, তোমাদের মা-বাবা যখন ভোট দিতে যাবে, তখন তাদের জামা-পায়জামা, শাড়িতে টান দিবা। টান দিয়া বলবা, “তোমরা দেশের ছেলে ফারুক চৌধুরীকে ভোট দিবা।” এই কথাটা বলবা তোমরা। কেন বলবা, এরপর আমি এমপি হলে আমি তোমাদের এই স্কুলে চারতলা বিল্ডিং করে দেব।’
সোমবার দুপুরে তানোরের তালন্দ ইউনিয়নের লালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এই বক্তব্য দেন ওমর ফারুক। মাঠটি লালপুর উচ্চবিদ্যালয় ও লালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝখানে। একইভাবে উপজেলার সরনজাই উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বর্ধিত সভার জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি বিকেলে গিয়ে ভাষণ দেন। সভায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, উপকারভোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশেও কথা বলেন সংসদ সদস্য।
বক্তব্যের শুরুতে ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে বেশি প্রত্যাশা করি না। আপনারা প্রতিজন দুটি-তিনটি করে ভোটার সঙ্গে করে বেঁধে নিয়ে যাবেন। বলবেন, “চলো আমরা দেশের ছেলেকে ভোট দেব।” আমরা বিএনপিকে ঠাঁই দেব না।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবন করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আর তোমরা তো ছোট মানুষ অনেক কিছুই জানো না। আমি যে কথা বলি, ইনশা আল্লাহ, সেটা মিস হয় না। এবার তোমাদের স্কুল আমার টার্গেটে। এবার আমাকে ৫০ পার্সেন্টের ওপরে ভোট দেওয়া তোমাদের টার্গেট। তোমরা তোমাদের গ্রামে আর গ্রামের আশপাশে দল বেঁধে ঘুরবা আর মানুষকে বলবা, নৌকায় ভোট দেন, নৌকায় ভোট দেন।’
বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমাকে কেউ পেছন দিকে ঠেলতে পারেনি, সামনেও কেউ পারবে না। আমার কপাল হলো রাজকপাল। আমি প্রথম ২০০১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। আমার হাতে যখন মনোনয়নপত্র, তখন নাকি গোদাগাড়ীতে মনোনয়ন পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এক নেতা মিষ্টি বিতরণ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যারা করে, তাদের দম একটু বেশি, তারা এইভাবেই কথা বলে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, আমি ছিলাম, আছি এবং ইনশা আল্লাহ, থাকব। যে যত কথাই বলুক, সে কথার এক পয়সা দাম নাই।’
সভার প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, শিক্ষকদের নির্দেশনায় শ্রেণিকক্ষে বই রেখে লালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সংসদ সদস্যের সভায় শিক্ষার্থীদেরও যোগ দিতে হয়।
এদিন তাদের মাত্র একটি ক্লাস হয়েছে। বিদ্যালয় চলাকালে মাঠে জনসভা করার বিষয়ে জানতে চাইলে লালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘উনারা করলে আমার কিছু বলার ক্ষমতা আছে?’ তবে প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, তাঁর শিক্ষার্থীরা সভা চলাকালে ক্লাসের ভেতরে ছিল, বাইরে বের হয়নি। হাইস্কুলের ছাত্ররা এসেছিল।’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে লালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে বলেন, তিনি ঝামেলায় আছেন। ফোনে কথা বলতে পারবেন না। সামনাসামনি আসতে হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল করিম এতে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি লুৎফর হায়দার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে প্রদীপ সরকার, কৃষক লীগ সভাপতি রাম কমল সাহা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার, ভাইস চেয়ারম্যান কৃষক লীগের সম্পাদক আবু বাক্কার সিদ্দিক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ইসলাম প্রমুখ।
একই দিন বিকেলে সরনজাই উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাকে কেন্দ্র করে সরনজাই বিদ্যালয়ের ভেতরে সকাল থেকে রান্নার কাজ চলে। অবশ্য সভা শুরু হয়েছে বিকেলে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান বলেন, বেলা একটার মধ্যে তাঁদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। সভা হয়েছে বিকেলে।
বিদ্যালয় চলাকালে সভার বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ওই বর্ধিত সভার আয়োজন করেছিল। সেখানে তাঁকে তারা অতিথি হিসেবে ডেকেছে। তাই তিনি গিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এই সংসদ সদস্যের দাবি, তাঁর মাথায় একদম ছিল না যে সেদিন বিদ্যালয় খোলা ছিল। ওখানে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের দেখেছেন। ভবিষ্যতে কর্মসূচি হাতে নেওয়ার আগে অবশ্যই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন বলে জানান তিনি।
এর আগে ১৯ অক্টোবর তানোর পৌর এলাকার তানোর মহিলা ডিগ্রি কলেজে (চাপাড়া) সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছিলেন, শিক্ষকেরা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই পারেন।