বিএনপিকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য দলটির ভাইস চেয়ারম্যানের
নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়াউর রহমানের আদর্শের বাইরে যাওয়ার কারণে বিএনপি এতো বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বিএনপিতে সত্যি কথা বলার মতো লোক নেই, এটা বাস্তবতা। কিছু ভুল ধরিয়ে দেয়ার দরকার। সত্য কথা বলার লোক নেই বিএনপির চেয়ারপারসনের সামনে। তারা শুধু ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার করে চলে থাকে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের যায়যায় অবস্থা, নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া উচিত ছিল। সেটা গ্রহণ না করে ফায়দা হয়নি। বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প পথ খুঁজে বের করা উচিত।
বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অন্য দল গঠন করতে যাচ্ছি তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সঠিক নয়। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। গত কয়েক মাস সিএমএইচ ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছি। আবারও সিঙ্গাপুর যাবো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। বিএনপির রাজনীতি থেকেও অনেকটা দূরে আছি। ৩১ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছি। অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি জানান, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। সেই সময় শওকত মাহমুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না, এখনও নেই। অথচ আমাকে এসব অভিযোগে অভিযুক্ত হই, এসব মেনে নিতে পারিনা। আমি সেসময় আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরি।
পদ-পদবীর জন্য রাজনীতি করিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৩ বছর ধরে আমি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। স্থায়ী কমিটির দুই জন ছাড়া সবাই আমার নিচে ছিল, এখন সবাই ওপরে উঠেছে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অংশ নেয়া সম্ভব নয়। এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানাবো।
আন্তর্জাতিক শক্তির মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করতে হবে। রাজপথে শুধু স্লোগান দিলেই সরকারের কাছে দাবি আদায় সম্ভব হবে না। বিএনপির উচিত কীভাবে আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করা।
তার দাবি, আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে টহল দেবে, সক্রিয় থাকবে। মেজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হবে।
হাফিজ বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি সংঘাতের রাজনীতির অবসান হবে। এসময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আট বছর ধরে দলের কোনো কাউন্সিল হয়নি। নেতা নির্বাচন হয়নি। এভাবে চলতে পারে না, দলের সংস্কার করুন। তিনি প্রশ্ন তোলেন- কেন কমিটি বাণিজ্য হবে, ত্যাগীদের কেন অবমূল্যায়ন করা হবে? একনায়েকত্ব চলছে। কেন কমিটি বাণিজ্য করে পকেট ভারী করতে হবে। সাংগঠনিক নেতা নির্বাচনে শৃঙ্খলা আনুন। ত্যাগী নেতারা কেন বঞ্চিত? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল পরিচালনা করেন।
শারীরিক কারণে শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ সদস্য হয়ে বিএনপির সঙ্গেই থাকতে চাই। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তিও দাবি করেন তিনি। তিনি এও বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচন করে তাহলে বিএনপির হয়েই নির্বাচন করবো।
অভিযোগ করে হাফিজ বলেন, ২০২০ সালে ১১টি অভিযোগ এনে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। চিঠির জবাব দেয়ার পর আমি জানিনা, সে চিঠি গ্রহণ হয়েছে কিনা না বা বাতিল হয়েছে। এমন আচরণ আমি ডিজার্ভ করিনা। জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তিন বছর হলো চিঠির জবাব পাইনি।
শওকত মাহমুদের সঙ্গে কোনো মিছিলে যোগ দেইনি। তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আগেও ছিলোনা, এখনও নেই। তারপরও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যোগ করেন হাফিজ।
খুব শিগগিরই রাজনীতি থেকে বিদায় নেবো জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনে দাবি আদায় করতে জানতে হবে। রাজপথে স্লোগানে কিছু হবেনা। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ খুব দুর্বল বিএনপির। কোনো সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।
তার আশা, আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে।