বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত কে এই পিটার হাস
নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আর সময় আছে প্রায় দুই মাস। ফলে দিন যতই কমে আসছে, রাজনীতির মাঠ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে। আর বিএনপি-জামায়াতসহ সমামনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের দমিয়ে রাখতে আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
এবারের জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক দলের বাইরেও সোচ্চার আছেন বিশ্বের অনেক প্রভাশালী দেশ ও সংগঠন। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কড়া নজরদারিতে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সবচেয়ে বেশ আলোচিত হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
জানা গেছে, এক বছর নয় মাস থেকে পিটার ডি হাস সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিতে। প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা করার। এমনকি ভিসা নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার যেসব বলিষ্ঠ কর্মকাণ্ড রয়েছে, এগুলোকে প্রয়োগ করার জন্য তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। যথেষ্ট শ্রম দিচ্ছেন।
তবে বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। অনেকে তাকে বিরোধী দলীয়দের ত্রাণকর্তা বলছেন। পিটার ডি হাসের কাছে যে বিএনপির জনপ্রিয়তা সেটি কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের লোকজন সহ্য করতে পারছেন না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বার বার উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে মতামত ব্যাক্ত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। তিনি তার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্রশংসাও করেছেন।
বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, ‘‘তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ দলের পক্ষে নয়; বরং বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে সমাজের সকল স্তরের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং করতে থাকব। আমরা যেকোনো সহিংস ঘটনাকে মারাত্মক গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিচ্ছি।’’
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমরা সরকার, বিরোধী দলগুলো, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশি জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি এবং জানিয়ে যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত বলেন, ‘‘ঢাকায় আমাদের দূতাবাসে আমাদের দারুণ একটি প্রতিভাবান টিম রয়েছে; যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূত। যিনি কেবল বাংলাদেশেই নয়, এর চেয়েও বড় অঞ্চলেও কাজ করতে সক্ষম।
কে এই পিটার হাস
২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসকে নিয়োগ করেন। সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের মিনিস্টার-কাউন্সিলর মর্যাদার পেশাজীবী সদস্য মিস্টার হাস ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং একইসাথে অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি বাণিজ্য নীতি ও সমঝোতা বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মিস্টার হাস অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-এর যুক্তরাষ্ট্র মিশনে শার্জে দ্য ফেয়ার ও ডেপুটি পার্মানেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, ভারতের মুম্বাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কনসুল জেনারেল এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ইকোনোমিক কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি লন্ডন, রাবাত, ওয়াশিংটন, পোর্ট-অ-প্রিন্স ও বার্লিন-এ বিভিন্ন কূটনৈতিক পদে কর্মরত ছিলেন।
পিটার হাস ২০২২ সালের মার্চ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত আছেন। তার প্রয়াসে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে বেশি উন্নত স্তরে নিয়ে গেছেন এবং দুটি দেশের মধ্যে বিশেষ বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে মূল্যবান ভূমিকা পালন করছেন বলে দাবি করা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইডে।
মিস্টার হাস ইলিনয় ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং জার্মান ভাষায় বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে মার্শাল স্কলার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্ব অর্থনীতির রাজনীতি ও তুলনামূলক সরকার উভয় বিষয়ে এমএসসি (অর্থনীতি) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের জেমস ক্লেমেন্ট ডান পুরস্কার এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অর্জন বিষয়ক কর্ডেল হাল পুরস্কার পেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতির উন্নয়ন এবং বিদেশী বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহায্য করার জন্য মার্কিন ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রচারে মিস্টার হাসের তিন দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইনী, নিয়ন্ত্রক এবং নীতি পরিবর্তনের জন্য সফলভাবে সমর্থন করেছিলেন।
স্টেট ডিপার্টমেন্টে কর্মজীবনে মিস্টার হাস ওয়াশিংটনে ঊর্ধ্বতন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণী পদে কাজ করেছেন, যার মধ্যে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক নীতি গঠনেও কাজ করেন। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থায় মার্কিন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মিস্টার হাস বর্তমানে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মনে করেন, ফলাফল প্রদানের জন্য একটি বড় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, মরক্কো এবং হাইতিসহ বিভিন্ন দেশে বাস করেছেন এবং কাজ করেছেন।
মিস্টার হাস মনে করেন, কোম্পানিগুলির জন্য নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করার জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপক পরামর্শের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বাণিজ্য সংস্থা, সরকার, মিডিয়া এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে টেকসই সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
সূত্র- https://bd.usembassy.gov/bn/our-relationship-bn/our-ambassador-bn/, https://www.linkedin.com/in/pdhaas/