যে খাবার অর্ডার দিলে অপেক্ষা করতে হয় ৪৩ বছর!

টুইট ডেস্ক : খাবার পেতে গ্রাহককে অপেক্ষা করতে হবে ৪৩ বছর! পশ্চিম জাপানের তাকাসাগো শহরে রয়েছে এমনই এক অদ্ভূত খাবারের দোকান।

এই শহরে মাংসের দোকান আসাহিয়ায় এক বক্স ফ্রোজেন কোবে বিফ ক্রোকেট অর্ডার করলে করতে হয় এই দীর্ঘ অপেক্ষা। আর এই অর্ডার দিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন ৬৩ হাজার গ্রাহক।

তুমুল জনপ্রিয়তার কারণেই পারিবারিক এই দোকানে কোবে বিফ ক্রোকেট অর্ডার দিলে অপেক্ষা করতে হয় এতো দীর্ঘ সময়।

আসাহিয়া ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কয়েক দশক ধরে হায়োগো প্রিফেকচারের কোবে বিফসহ মাংসের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হত এখানে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানের তালিকায় যোগ করা হয় বিফ ক্রোকেট।

এই বিফ ক্রোকেট গরুর মাংসের সঙ্গে কড়া করে ভাজা আলু দিয়ে তৈরি করা হয়। অত্যন্ত লোভনীয় এক্সট্রিম ক্রোকে আসাহিয়ার চার ধরনের কোবে বিফ ক্রোকেটের মধ্যে একটি।

সিএনএন ২০২২ সালে আসাহিয়ার তৃতীয় প্রজন্মের মালিক শিগেরু নিত্তার সঙ্গে কথা বলে। তখন ক্রোকের জন্য সিরিয়াল ছিল ৩০ বছরের!

নিত্তা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৯ সালে অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের পণ্য বিক্রি করতে শুরু করি। তখন আমরা ট্রায়াল হিসেবে গ্রাহকদের এক্সট্রিম ক্রোকেট অফার করি।’

হায়োগোতে বেড়ে ওঠা নিত্তা ছোটবেলা থেকেই তার বাবার সঙ্গে স্থানীয় খামার ও গরুর মাংসের নিলামে যেতেন। তিনি ১৯৯৪ সালে ৩০ বছর বয়সে তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে দোকানটি পান।

কয়েক বছর ধরে ই-কমার্স নিয়ে পরীক্ষা করার পর তিনি বুঝতে পারেন যে, ক্রেতারা উৎকৃষ্ট মানের গরুর মাংসের জন্য অনলাইনে বেশি টাকা দিতে দ্বিধা বোধ করেন না। তখনই তিনি এই সাহসী উদ্দ্যোগ নেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা তখন এক্সট্রিম ক্রোকেট প্রতি পিস ১.৮০ ডলার মূল্যে বিক্রি করেছি। যেখানে প্রতি পিস গরুর মাংসের দামই ছিল প্রায় ২.৭০ ডলার।

আমরা কম দামে অলাভজনক এই সুস্বাদু ক্রোকেট তৈরি করেছিলাম। এটি ছিল ক্রেতাদের ক্রোকেটের মাধ্যমে আকৃষ্ট করে আমাদের কোবে গরুর মাংস বিক্রয় করার একটি কৌশল।’

এক্সট্রিম ক্রোকেটের ব্যয়বহুল উপাদানের তুলনায় এর দাম খুব সস্তা। কোনও প্রিজারভেটিভ ছাড়াই প্রতিদিন তাজা মাংস দিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়। এর উপাদানের মধ্যে রয়েছে তিন বছর বয়সী কোবে বিফ ও স্থানীয় খামারে চাষ করা আলু।

নিত্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিচিত লোকদের কাছ থেকে বিফ এনে বিক্রি করি। আমাদের দোকান শুধু হায়োগো প্রিফেকচারের মাংস বিক্রি করে। তা কোবে বিফ, কোবে পর্ক বা তাজিমা চিকেন যাই হোক না কেন। আমি মালিক হওয়ার আগে থেকেই এটি দোকানের নিয়ম ছিল।’

২০০০ সালের শুরুর সময়ে আসাহিয়ার ক্রোকেট সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে যায়।

নিত্তা বলেন, ‘আমরা ২০১৬ সালে ক্রোকেট বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ তখন এর জন্য ১৪ বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হত। আমরা সে সময় অর্ডার নেয়া বন্ধ করার কথা ভাবছিলাম।

তবে অফারটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কাছে অনেক কল আসতে থাকে। তাই আমরা ২০১৭ সালে দাম বাড়িয়ে দিয়ে আবারও ক্রোকেটের অর্ডার নেয়া শুরু করেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমরা দাম বাড়িয়ে ৩.৪০ডলার থেকে ৩.৬৫ ডলার করি। কোবে বিফ রফতানি শুরু হওয়ার পর থেকে গরুর মাংসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তাই ক্রোকেটের উৎপাদন খরচে যে ঘাটতি ছিল তা পরিবর্তন হয়নি।’

আর্থিক ক্ষতি কমানোর জন্য আসাহিয়া প্রথম দিকে তাদের দোকানের পাশে নিজস্ব রান্নঘরে প্রতি সপ্তাহে ২০০ টি ক্রোকেট তৈরি করত। জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় এখন উৎপাদন বাড়িয়ে প্রতিদিন ২০০টি করে ক্রোকেট তৈরি করা হয়।

ক্ষতি হলেও নিত্তার মতে, এটি একটি ভালো মার্কেটিং কৌশল। কারণ তাদের কাছ থেকে যারা ক্রোকেট খান তাদের প্রায় অর্ধেক মানুষ কোবে বিফও অর্ডার করেন।

আসাহিয়ায় পাঁচ পিস এক্সট্রিম ক্রোকেটের একটি বক্সের মূল্য বর্তমানে ১১৮.২০ ডলার।

অপেক্ষারত ক্রেতাদের শিপিংয়ের ঠিকানা আপডেট করে দোকান থেকে নিয়মিত একটি নিউজলেটার পাঠানো হয়। ডেলিভারির তারিখের এক সপ্তাহ আগেই দোকান থেকে ক্রেতাদের ডেলিভারি দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

নিত্তা বলেন, ‘এত দিনে অনেকেই তাদের ইমেল পরিবর্তন করেছেন। এজন্য আমরা তাদের সরাসরি কল করি এবং তাদের ডেলিভারির তারিখ জানাই।

আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের ঠিকানা নিজেরাই পরিবর্তন করতে পারেন। আবার আমরা আমরা কল করলেও তারা আমাদের জানাতে পারেন।’

বর্তমানে যেসব ক্রেতাদের কাছে ক্রোকেট ডেলিভারি করা হয়েছে তারা প্রায় ১০ বছর আগে অর্ডার করেছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমানে ৬৩ হাজার মানুষ ক্রোকেটের অপেক্ষায় রয়েছেন। যা পেতে অপেক্ষা করতে হবে ৪৩ বছর।