‘ম্যালা মাইরেছেন ভাই, একটু পানি দেন, মরে যাব’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর ছেলেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে মারধরের ছবি স্পষ্ট না হলেও পেটানো ও আত্মচিৎকার শোনা যাচ্ছে।
বুধবার হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওই ঘটনার পর নগরীর বোয়ালিয়া থানার বোসপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুমন পারভেজ রিপন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ওয়ার্ডের দুই ইন্টার্ন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বরখাস্ত দুই চিকিৎসক হলেন- ফরহাদ হাসান ও আলমগীর হোসেন।
রিপনের মা পিয়ারা বেগম (৬০) ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। শুক্রবার তাকে হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে তার মায়ের একটি রিপোর্টের বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলে তারা ‘একেকবার একেক রকম তথ্য দেন’ বলে রিপনের অভিযোগ।
তিনি বলেন, এ নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা আমাকে রিপোর্টে কী আছে সেটি বুঝিয়ে বলার জন্য তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তারা আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। ১০-১৫ জন মিলে আমাকে পিটিয়েছে। আমরা সমস্ত শরীরে দাগ পড়ে গেছে। রিপন গায়ের পোশাক খুললে দেখা যায়, আঘাতের কারণে তার সমস্ত শরীরেজুড়ে লাল লাল দাগ পড়ে গেছে।

ভিডিওটির প্রথম ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড দেখা গেলেও পরের অংশটুকু অন্ধকার। তবে মারধরের শব্দ, আকুতি, অশ্লীল কথাবার্তা এসব বোঝা যাচ্ছিল।
রিপনকে বলতে শোনা যাচ্ছিল, “আর মাইরেন না ভাই। ম্যালা মাইর্যাছেন ভাই। আমাকে একটু পানি খেতে দেন। আমি মরে যাব। আমি ভুল করেছি। ক্ষমাই চাইছি। আর মাইরেন না। আমাকে মারার কথা আম্মাকে বইলেন না। আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
এ সময় চিকিৎসকদের রিপনকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে একজন চিকিৎসক বলেন, “বল মাফ চাইছস।” তখন রিপন বলেন, “হ মাফ চাইছি।”
এরপরও রিপনকে মারধরের শব্দ শোনা যায়। তার মাথা ন্যাড়া করে দিতে চান। এ ছাড়া ‘চিকিৎসকদের মারতে চাওয়ায়’ রিপনের হাত কেটে নিতে চান।
ওই ভিডিও ও মারধরের ব্যাপারে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত দুই বছর ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কোনো কমিটি নেই।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আরও কিছু কাজ আছে। সেগুলো সম্পন্ন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই ইন্টার্ন চিকিৎসক বরখাস্ত থাকবেন।
এদিকে ভুক্তভোগি রিপন অভিযোগ করেছেন, অভিযোগ করতে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর রাজপাড়া থানায় গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পুলিশ তার অভিযোগ নেয়নি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে থানার ওসি রফিকুল হক দাবি করেন, রিপন থানায় গিয়েছিলেন, তবে অভিযোগ না করেই চলে গেছেন।
ওসি বলেন, ছেলেটা এসে বলল, সে অভিযোগ করবে। আমরা বললাম, অভিযোগ নেব। সমস্যা নাই। পরে সে বলল, তার মাকে অন্য জায়গায় চিকিৎসা করাবে। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। এটা শুনে আমি হাসপাতালে ফোন করলাম। হাসপাতাল থেকে আমাকে জানিয়েছে যে, তার মাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। পরে আমি একটা মিটিংয়ে যাই। এসে ছেলেটাকে আর পাইনি।






