প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে মিয়ানমারের ৫৮ সীমান্তরক্ষী: ১০ বাংলাদেশী গুলিবিদ্ধ

টুইট ডেস্ক: সংঘাতময় মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) অর্ধশতাধিত সদস্য। মিয়ানমারের এই সীমান্তরক্ষীরা রোববার কয়েক দফায় বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় ঢোকেন।

মিয়ানমারের আরকান রাজ্য। এ অঞ্চলের পূর্ব ও পশ্চিমাংশে বিদ্রোহী এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে চলছে ব্যাপক গোলাগুলি। সীমান্তের ওপারে থেকে বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ বাংলাদেশী ।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম রাত সোয়া ৮টায় জানান, এখন পর্যন্ত বিজিপির ৫৮ জন সদস্য বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা এখন আছেন বাংলাদেশের বিজিবির হেফাজতে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ও রাতে সীমান্তের ওপারে রাখাইনের তুমব্রু রাইট পিলার ক্যাম্প এলাকা থেকে এলোপাতাড়ি গোলাগুলির শব্দ পান স্থানীয় এলাকাবাসী। সকালে খবর আসে, রাতের যুদ্ধে মিয়ানমারে বর্ডার গার্ড পুলিশের একটি ফাঁড়ি আরাকান আর্মির যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে।

সেই ফাঁড়ির কিছু সদস্যই পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ বা আহত। তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিজিবি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, তাদেরকে এক জায়গায় রাখা হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (বিজিবি) মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন যেন তারা এদেরকে নিয়ে যান।

আরাকানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের কাছে কী তথ্য আছে- সে প্রশ্নে কামাল বলেন, “আরাকান আর্মি নামে এক বিদ্রোহী গ্রুপ রাখাইন সাম্রাজ্যের একের পর এক জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ক্রমাগত তারা শক্তিশালী হয়ে আরো সামনের দিকে যাচ্ছে। সেখানে আর্মির সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। তাদের একের পর এক ঘাঁটিগুলো আরকান আর্মি দখল করে নিচ্ছে। আমাদের বর্ডারের সঙ্গে সংলগ্ন যেগুলো ছিল, সেগুলোও তারা দখল করে নিয়েছে।

মিয়ানমারে সশন্ত্র লড়াইয়ের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন করে কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে, সে দিকে সরকার সতর্ক রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জানান। তিনি বলেন, মিয়ানমারে এই যুদ্ধ কত দিন চলবে আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশ সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আর আসতে দেওয়া হবে না।

এই লড়াইয়ের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নতুন করে বাধাগ্রস্ত হবে কি না-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা হতে পারে। এটা সবাই বোঝে একটা অস্থির পরিবেশ চলছে সেখানে। বিভিন্ন কারণেই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে সকলকে ফেরত দেওয়ার প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত আছে।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ, বিজিপি সদস্যের বাংলাদেশে প্রবেশ এবং বাংলাদেশের ভেতর মর্টারশেল পড়ার ঘটনাগুলো ‘উসকানিমূলক’ কি না- এই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, না কোনো ধরনের উসকানি নেই। সবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমাদের দেশে মর্টারশেল পড়েছে এটা সত্য, তবে কোনো আহত নিহতের ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে সে দেশকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।