যুদ্ধের মাঝেও ফুটবলে ইতিহাস গড়ল ফিলিস্তিন
টুইট ডেস্ক : রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই দোহার আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে তৈরি হলো অন্যরকম এক পরিবেশ। মোহাম্মেদ সালেহ সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।
উঠে দাঁড়িয়ে মাথা তোলার শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। একমাস আগেও তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দা। তার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেকেই গতকাল সাক্ষী হলেন অন্যরকম বিজয়ের।
হংকংয়ের জালে যখন ফিলিস্তিন একের পর এক গোল দিচ্ছে, তখনও নিজ দেশে আছড়ে পড়ছিল ইসরায়েলের বোমা। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে জীবনযাপন করাটাই দায়, সেখানে ফুটবলটা নিতান্তই বিলাসিতা।
তবে ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা এশিয়ান কাপে এসেছে। উপহার দিয়েছে নান্দনিক ফুটবল। আর গ্রুপপর্বের শেষদিনে তারা তৈরি করেছে ইতিহাস।
প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের নকআউট পর্বে কোয়ালিফাই করেছে ফিলিস্তিন। গতকাল হংকংকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় তারা। এশিয়ান সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে এটিই তাদের প্রথম জয়। আর এই জয়টাই তাদের নিয়ে গেল নকআউট পর্বে।
১ জয়, ১ ড্র ও ১ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘সি’র তৃতীয় অবস্থানে থেকে পরবর্তী পর্ব নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিন। তৃতীয় হওয়া দলগুলোর মধ্যে সেরা চারটির একটি হওয়ায় শেষ ষোলোয় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
হংকংয়ের বিপক্ষে দোহার আবদুল্লাহ বিন খলিফা স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে দাপট দেখিয়ে খেলেছে ফিলিস্তিন। ৬৮ শতাংশ বল দখলে রেখেছে। ১৯টি শট নিয়ে ৭টি ছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচে দলটির হয়ে হয়ে জোড়া গোল করেছেন ওদায় দাবাগ। দাদ্বশ ও ৬০তম মিনিটে লক্ষ্যভেদ করেছেন এই ফরোয়ার্ড। অন্য গোলটি আসে জাইদ কুনবার পা থেকে।
তবে এদিন আসল নায়ক ছিলেন দলের অধিনায়ক মুসাব। রাইটব্যাকে খেলা ৩০ বছর বয়েসি এই ফুটবলার দাপিয়ে বেরিয়েছেন পুরো মাঠে।
ওদায় দাবাগের প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট এসেছিল তার পা থেকে। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে জাইদ কুনবার গোলেও ছিলেন তিনি। রক্ষণও সামলেছেন সমানতালে।
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অনেক খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারা নিজেদের স্বজন হারিয়েছেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফুটবল দিয়েই নিজেদের জনগণকে সান্ত্বনা দেওয়ার কথা বলেছিলেন তারা। সেই কথাই তারা রাখলেন শেষ পর্যন্ত। শেষ ষোলোতে তাদের প্রতিপক্ষ হট ফেবারিট এবং টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কাতার।
ম্যাচ শেষে ফিলিস্তিন অধিনায়ক মুসাব আল বাত্তাত বলেন, এই পারফরম্যান্স মূলত নিজ দেশের জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে, ‘আমরা একটা পরিষ্কার বার্তা দিতে চেয়েছি।
আমাদের সব ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল আসরে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। আর সেটা কেবল নিছক স্থান পূরণের জন্য না বরং নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দেওয়ার জন্য।