জাতিসংঘের মার্কিন-ব্রিটিশ কর্মীদের ইয়েমেন ছাড়ার নির্দেশ হুথিদের

টুইট ডেস্ক : ইয়েমেনে জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মীদের দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেন ত্যাগের জন্য তাদেরকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ২০ জানুয়ারি একটি চিঠির কপি পোস্ট করেছিল হুথি গোষ্ঠী। সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে চিঠিটি।

সেখানে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে ইয়েমেনে জাতিসংঘের মিশনে কর্মরত মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মীদের ইয়েমেন ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য তাদেরকে এক মাসের সময় দেওয়া হলো। এই সময়সীমা পেরোনোর আগেই তাদের ইয়েমেন ত্যাগ করতে হবে।’

ইয়েমেনে জাতিসংঘ মিশনের সমন্বয়ক বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা সেই চিঠিটি দেখেছি। এখনই কোনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আপাতত জাতিসংঘ এবং তার অংশীদাররা এ ইস্যুতে (হুথিদের) পরবর্তী পদক্ষেপ দেখার জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর গত অক্টোবর মাস থেকে হামলা শুরু করে হুথিরা।

গত প্রায় চার মাসে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার ঘটার পর গত ১২ জানুয়ারি হুথিদের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় মার্কিন ও ব্রিটিশ বিমান বাহিনী। সেই হামলায় হুথি গোষ্ঠীর কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং নিহত হন অন্তত ৬ জন।

গত সপ্তাহে ফের ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে নথিভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগেও এই নামে গোষ্ঠীটিকে নথিভুক্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু ২০২১ সালে গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ কবলিত ইয়েমেনে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠানোর সুবিধার্থে হুথিদের ওপর থেকে এই তকমা সরিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষট্র।

আরব উপদ্বীপের অন্যন্য দেশের মতো ইয়েমেনও একসময় সমৃদ্ধ দেশ ছিল। ইয়েমেনের দুর্দশা শুরু হয় ২০১৫ সালে, গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসানের পরিবর্তে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন। যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে ইয়েমেনে মানবিক সহায়তা তৎপরতা পরিচালনা করছে জাতিসংঘ।