যুদ্ধ বন্ধে চীনের সহানুভূতি চায় ইউক্রেইন

বিশ্ব ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের তৃতীয় বছর চলমান থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পেতে হিমশিম খাচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির যেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় তিনি চায়নাকে মূখ্য ভূমিকায় দেখতে চান। যেলেনস্কি এ সময় চীনকে তাদের দূতদের সাথে রুখতে আহ্বান করেছেন এবং বলেছেন, “চীন এখন এই বিশেষ সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকতে পারে।

সুইজারল্যান্ডের ড্যাভোস এ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য নেতাদের কাছে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর মিত্র চায়না। সেখানে যেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি চান ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনায় চায়না অংশগ্রহন করুক।

বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-ইউক্রেন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শান্তি আলোচনার সব পর্যায়েই চায়নার অন্তর্ভুক্তি চায় তার দেশ।

তবে চাইনিজ প্রিমিয়ার লি কিয়াং যেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই এই সপ্তাহের শুরুতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ত্যাগ করেছেন। এমনকি সেখানে চায়নার অর্থনীতি নিয়ে দেয়া তার ২৫ মিনিটের বক্তৃতায়ও তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ নিয়ে কিছু বলেননি।

‘চায়নার কর্মকর্তারা গত বছর যুদ্ধে শান্তি স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেশটিকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, বেইজিং এখনই ইউক্রেইনের হয়ে শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের দৃঢ় মিত্রতার সম্পর্ককে কোনো ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাইবে না।’

ওয়াশিংটন ভিত্তিক স্টিমসন সেন্টার থিংক ট্যাংক এর চায়না প্রোগ্রাম এর পরিচালক ইয়ুন সান বলেন, ‘চায়না ভাবছে শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতিতে তারা ইতোমধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আসলে চায়না যেভাবে চাইছে সেভাবে শান্তি আলোচনায় বসতে চাইছেন না যেলেনস্কি।’

গত বছর, রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যকার যুদ্ধ শুরুর প্রায় ১৪ মাস পর চায়নার নেতা শি জিনপিং প্রথমবারের মতো যেলেনস্কির সঙ্গে বার্তালাপ করেন। এরপর বেইজিং কিয়েভ ও মস্কো উভয় জায়গায়ই তাদের কূটনীতিক প্রেরণ করে। চায়না তাদের নিজস্ব একটি শান্তি পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা ইউক্রেনের দাবির বিপরীতে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলে রাখা রাশিয়ান সেনাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি বাদ দিয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

‘সান আরও বলেন, ‘চায়না হয়তো প্রথমে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিল কারণ তারা চায়নি যে যুদ্ধে রাশিয়া বাজেভাবে হেরে যাক। কিন্তু এখন এই বিষয়ে চায়নার দুশ্চিন্তা করার মতো তেমন কিছুই নেই। তাই এখন যুদ্ধক্ষেত্রের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য চায়না আরও সময় পাবে যা যেকোনো ধরণের শান্তি আলোচনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’

‘তিনি যোগ করেন, ‘বর্তমানে অ্যামেরিকার মনোযোগ গাজার দিকে থাকায় ও ইউক্রেইনের যুদ্ধ সক্ষমতা সীমিত হয়ে যাওয়ায় সবকিছু রাশিয়ার পক্ষে চলে গেছে। তাই পশ্চিমা ও ইউক্রেইনের চাওয়া অনুযায়ী শান্তি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করার জন্য চায়নার ওপর তেমন কোনো চাপ নেই।’

‘কায়রোতে বছরের প্রথম আফ্রিকা সফরে চায়নিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ই গাজায় তিন মাস ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আরব লীগের নেতাদের সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি এই যুদ্ধের প্রতি প্রথম থেকেই থাকা বেইজিংয়ের আবস্থান স্পষ্ট করেছেন।’

ওয়্যাং আর বলেছেন, ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের জন্য একটি দ্বি রাষ্ট্র ভিত্তিক সমধান নিশ্চিত করতে অধিকতর কার্যকর ও বড় পরিসরের আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজনের জন্য আহ্বান করেছে চায়না।

প্যালেস্টাইনকে ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে চায়না অন্যতম যারা অনেক দিন ধরেই ওই আঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান সমর্থন করে আসছে।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বটি আমেরিকার বিকল্প আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব হিসেবে চায়নাকে উপস্থাপন করার জন্য শি জিনপিং এর জন্য বড় একটি সুযোগ।

বার্লিনের কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক অ্যালেক্স গাবুয়েভ বলেন, ‘গাজায় সংঘাতের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেখানে চায়না শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতির জন্য একটি কার্যকর কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই ভালো ফলাফল করেছে।’