বিএনপি কর্মীরা ঘরছাড়া, নেতারা কারাগারে
টুইট ডেস্ক : সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন-কালীন নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ দেশজুড়ে ধরপাকড় আর মামলায় জেরবার বিএনপি। শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিদিনই আটক হচ্ছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নয়াপল্টনসহ কয়েকটি এলাকা। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে একে একে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতাকে।
দলের স্থায়ী কমিটির সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে অন্য চারজন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন। শনিবার সন্ধ্যায় আটক করা হয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সকে। পরিবারের অভিযোগ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড্ডায় তাঁর বোনের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে নিয়ে গেছে।
অপরদিকে, পুলিশের করা ১০টির মতো মামলায় চট্টগ্রাম বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বেনামে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আছেন জেলা, মহানগর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও। তাঁদের ধরতে পুলিশ দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে। এতে চট্টগ্রামে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমন চিত্র সারা দেশেই।
দলীয় নেতাকর্মীদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, ‘পুলিশের মিথ্যা মামলায় আমাদের সাধারণ কর্মীদের পর্যন্ত বাড়িতে থাকা হারাম হয়ে গেছে। পুলিশ প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতা-কর্মীরা বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হরতাল ও তিন দিনের অবরোধ ঘিরে যশোরে শনিবার পর্যন্ত বিএনপির সাড়ে চার শর মতো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ২২টি মামলা দিয়ে আসামি করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে।
খুলনায় নাশকতার নতুন মামলায় ১১ বছর আগে মৃত্যুবরণকারী এমনকি জেলখানায় বন্দী থাকা ব্যক্তিসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে বেশ কিছু মামলা করেছে পুলিশ। জেলার ৯ থানায় ১২টি এবং মহানগরীর তিনটি থানায় তিনটি মিলিয়ে মোট ১৫টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে গিয়ে খুলনার ১২৭ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, মামলা হলে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। যেহেতু মামলা হয়েছে, তাই গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতা-কর্মী নিরাপদ দূরত্বে আছেন। পুলিশি অভিযানের ভয়ে অনেকে বাড়িছাড়া।
এ অবস্থায় আগামী দিনে দলীয় কর্মসূচি পালন করা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করলেও আশার কথা বলছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এক দফার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপি। দেশব্যাপী এক দিন হরতাল ও তিন দিনের টানা অবরোধের পর আজ রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘মিথ্যা মামলা-হামলা আর ধরপাকড়ের মাধ্যমে জনগণের এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। যত দিন না এ দেশের মানুষের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সফল হবে, তত দিন আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলতেই থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিনে সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন, যাকেই যেখানে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠছে।
এদিকে বিরাজমান পরিস্থিতিতে কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়।দলের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানোর দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি অজানা স্থান থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন।
শনিবার বিকেলে এমনই এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও মামলার চিত্র তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৬ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২৩ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে মামলা হয়েছে ১১৩টি।