‘‘ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড’’ এবারও সেরা লিওনেল মেসি
টুইট ডেস্ক: ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা প্রবর্তিত অ্যাওয়ার্ড “দ্য বেস্ট”। বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়, কোচ ও গোলকিপারকে পুরস্কৃত করে থাকে ফিফা। এক্ষেত্রে একাধিক ধাপে চলে মনোনয়ন, বাছাই প্রক্রিয়া ও ভোটাভুটি। শেষে নির্ধারিত হয় সেরা খেলোয়াড়, কোচ ও গোলকিপার।
একাধিক ধাপে চলে বাছাই প্রক্রিয়া ও ভোটাভুটি, সমান পয়েন্ট পেয়েও এবার সেরা লিওনেল মেসি। ২০২৩ সালে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন মেসি। নারী বিভাগে এই সম্মান অর্জন করেছেন স্প্যানিশ তারকা এইতানা বোনমাতি।
গত বছরের ব্যালন ডি’অর জেতা লিওনেল মেসির হাতে আবারও গেছে ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ ফুটবলারের পুরস্কার। কিলিয়ান এমবাপে ও আর্লিং হাল্যান্ডকে পেছনে ফেলে পুরস্কার পেয়েছেন মেসি। যদিও মেসি আর ম্যানসিটি ফরোয়ার্ড আর্লিং হাল্যান্ডের লড়াই হয়েছে সমানে সমান।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত দেড়টার দিকে লন্ডনে জমকালো অনুষ্ঠানে ৮টি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় ফিফা “দ্য বেস্ট” পুরস্কার।
যেভাবে নির্ধারিত হয় অ্যাওয়ার্ড
অ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রথমে ফিফার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি প্রাথমিক তালিকা করেন ফিফা প্রতিনিধিরা। সেখান থেকে ফিফার বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বিচারকেরা একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেন। পুরুষ ও নারীদের জন্য দুটি আলাদা বিশেষজ্ঞ প্যানেল কাজ করে। বিশেষজ্ঞ প্যানেলে সাধারণত স্বনামধন্য সাবেক খেলোয়াড় ও কোচেরা থাকেন।
এবার ছেলেদের “দ্য বেস্ট”- এর ক্ষেত্রে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে বাছাই করে ফিফা ১২ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা জানায় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর।
এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলে ভোটাভুটি। একজন ভোটার ভোট করতে পারেন সর্বোচ্চ তিনজনকে। পছন্দ অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়- এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের রায় জানান। এখানে এক নম্বরে রাখা খেলোয়াড়ের জন্য বরাদ্দ ৫ পয়েন্ট, দ্বিতীয় স্থানে রাখা খেলোয়াড় ২ পয়েন্ট ও সবশেষে অবস্থানে রাখা খেলোয়াড় পান ১ ভোট। সবার মিলিত ভোটে যিনি এগিয়ে থাকেন, তিনিই জেতেন বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
কেন মেসিই সেরা
‘ফিফা দ্য বেস্ট’ অনুষ্ঠানে নিজেকেই ভোট দেননি মেসি, যে কারণে ছিলেন না ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ অনুষ্ঠানে।
ভোটারদের রায়ে শীর্ষ তিনে ছিলেন মেসি, এমবাপে ও হাল্যান্ড। তবে মেসি ও হাল্যান্ডের পয়েন্ট সমান হওয়ার পরেও পুরস্কার গেছে মেসির হাতে। এটি নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ছেলেদের “দ্য বেস্ট”- এর ক্ষেত্রে ফিফা দ্য বেস্টের রুলস অব অ্যালোকেশনের ১২ নম্বর ধারাতে বলা আছে, সেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে মোট পয়েন্ট সমান হলে জাতীয় দলের অধিনায়কদের প্রথম পছন্দের ভোট বা পাঁচ পয়েন্টের ভোট যে বেশি পাবেন, তিনি ওপরে থাকবেন। সেই হিসেবেই হাল্যান্ডের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে ২০২৩ সালের বর্ষসেরা হয়ে গেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
১০৭ জন অধিনায়ক বছরের সেরা খেলোয়াড়ের ভোট দিয়েছেন মেসিকে। হাল্যান্ডকে সেরা ভেবেছেন ৬৪ জন। এমবাপেকে সেরার ভোট দিয়েছেন ১৩ অধিনায়ক। দ্বিতীয় সেরার ভোটের জন্য ৩ ও তৃতীয় সেরার জন্য ১- এই হিসেবে মেসি সবমিলিয়ে অধিনায়কদের কাছ থেকে পেয়েছেন ৬৭৭ পয়েন্ট। হাল্যান্ড পেয়েছেন ৫৫৭ পয়েন্ট, তৃতীয় হওয়া এমবাপে ২৮২ পয়েন্ট পেয়েছেন।
মেসি-হাল্যান্ড-এমবাপে ছাড়াও অধিনায়কদের প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন আরও সাতজন। রদ্রি, বার্নার্ডো সিলভা, কেভিন ডি ব্রুইনা ও ইলকে গুন্ডোয়ান- এ সাতজনের চারজনই ট্রেবলজয়ী ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির। এছাড়া ৩৩ বছর পর নাপোলিকে সিরি’আ জেতানো দুই তারকা ভিক্টর ওসিমেন ও খিচা কাভারাস্কেইয়া এবং ইংলিশ তারকা ডেকলান রাইসও অন্তত একটি সেরা খেলোয়াড়ের ভোট পেয়েছেন।
একাধিক সংবাদ মাধ্যম হতে জানা য়ায়, ‘টাইব্রেকারে কোচ কিংবা সংবাদ মাধ্যমের ভোট হিসেব করলে মেসি নন, সেরা পুরুষ খেলোয়াড় হয়ে যেতেন হাল্যান্ড। কোচদের বিভাগে মোট ৫৪১ পয়েন্ট পেয়েছেন সিটি তারকা। এই বিভাগে মেসি পেয়েছেন ৪৭৬ পয়েন্ট। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভোটে মেসির চেয়ে দ্বিগুণের বেশি পয়েন্ট পেয়েছেন হাল্যান্ড। যেখানে হাল্যান্ডের পয়েন্ট ৭২৯, মেসির ৩১৫।’
সাধারণ ফুটবল ভক্তদের ভোটে অবশ্য আবার হাল্যান্ডের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন মেসি। ভক্তদের ৬ লাখ ১৩ হাজার ২৯৩ পয়েন্ট মেসির। হাল্যান্ড পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার পয়েন্ট।
ভোটের চার বিভাগের প্রতিটিতে যারা সেরা হয়েছেন, তারা পেয়েছেন ১৩ পয়েন্ট করে। দ্বিতীয় সেরারা ১১ পয়েন্ট করে ও তৃতীয় সেরারা ৯ পয়েন্ট করে পেয়েছেন। তালিকায় পরের দিকে থাকারা পেয়েছেন ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১ পয়েন্ট করে। এই চার বিভাগের পয়েন্ট যোগ করেই চূড়ান্ত হিসেব করা হয়েছে।
আরও যারা সেরা হলেন
এর মধ্যে স্পেনের হয়ে গত আগস্টে বিশ্বকাপজয়ী বোনমাতি জিতেছেন মেয়েদের “দ্য বেস্ট” পুরস্কার। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন কলম্বিয়ার লিন্ডা কাইসেদো ও বোনমাতির জাতীয় দল সতীর্থ হেনি হেরমোসো।
ছেলেদের “দ্য বেস্ট” কোচ হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হিসেবে “ট্রেবল” জেতেন গার্দিওলা। সংক্ষিপ্ত তালিকায় গার্দিওলার সঙ্গে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ইন্টার মিলানের কোচ সিমোন ইনজাঘি ও ইতালির কোচ লুসিয়ানো স্প্যালেত্তি।
‘ইংল্যান্ড নারী ফুটবল দলের কোচ সারিনা ভাইগমানের হাতে উঠেছে “দ্য বেস্ট” কোচের পুরস্কার। সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার সঙ্গে ছিলেন বার্সেলোনা নারী দলের কোচ জোনাতান গিরাল্দেজ ও চেলসির কোচ এমা হেইস।’
ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ট্রেবলজয়ী ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এডারসনের হাতে উঠেছে ছেলেদের “দ্য বেস্ট” গোলকিপারের পুরস্কার। সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার সঙ্গে ছিলেন মরক্কো ও আল হিলালের গোলকিপার ইয়াসিন বুনু এবং রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া। আর টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েদের “দ্য বেস্ট” পুরস্কার জিতেছেন ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার মেরি আর্পস।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানের জন্য ফিফা ফেয়ারপ্লে পুরস্কার পেয়েছে ব্রাজিল ছেলেদের জাতীয় দল।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে দ্বিতীয় বিভাগে খেলা গিলের্মে মাদুরগা জিতেছেন সেরা গোলের পুরস্কার পুসকাস অ্যাওয়ার্ড। বোটাফোগো-এসপির এই খেলোয়াড়ের বাইসাইকেল কিকে করা গোলটি সেরা বিবেচিত হয়েছে ভোটের মাধ্যমে।
‘ফিফা ফ্যান পুরস্কার জিতেছেন আর্জেন্টিনার ক্লাব কোলনের সমর্থক হুগো দানিয়েল ইনিগুয়েজ। গত বছর আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে বারাকাস-কোলন ম্যাচে নিজের বাচ্চা শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ম্যাচ দেখছিলেন এই সমর্থক। এছাড়া ফিফা স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মার্তা (ব্রাজিল)।
ফিফা দ্য বেস্টের সূচনার কথা
‘ফিফার অ্যাওয়ার্ড চালু হয় ১৯৯১ সালে। সেসময় পুরস্কারটি দেওয়া হতো “ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়” নামে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই নামেই চলেছে। এরপর ব্যালন ডি’অরের সঙ্গে মিলে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি দেওয়া হয় “ফিফা-ব্যালন ডি’অর” নামে। সবশেষ ২০১৬ সাল থেকে হয়ে আসছে বর্তমানে চালু “দ্য বেস্ট”।’
‘এখন পর্যন্ত ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন মোট ১৬ খেলোয়াড়। এর মধ্যে মেসি (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৩) ও রোনালদোই জিতেছেন (২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭) ১২বার।’
‘তবে ২০২৩ সালের “দ্য বেস্ট” হিসেবে সেরার ভোট দিতে গিয়ে নিজেকেই ভোট দেননি মেসি। সেরা তিনের জন্য সাবেক সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপেকেও বেছে নেননি তিনি। বরং প্রতিদ্বন্দ্বী আর্লিং হাল্যান্ডকেই দিয়েছেন ভোট। সেরার ভোটে মেসির সেরা তিন ছিলেন আর্লিং হাল্যান্ড, কিলিয়ান এমবাপে এবং হুলিয়ান আলভারেজ। ’
লন্ডনে পুরস্কার ঘোষণার সময়ও উপস্থিতও ছিলেন না মেসি। ব্যস্ত ছিলেন ইন্টার মিয়ামির দলীয় ট্রেনিংয়ে।