বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী শহর আরাকান আর্মির দখলে

বিশ্ব ডেস্ক : মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছ থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর নিজেদের দখলে নেয়ার দাবি করেছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির বরাতে মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আল জাজিরা।

গত রোববার বিকেলে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জান্তাবিরোধী বড় তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অন্যতম এই আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটির টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় সামরিক জান্তার আর একটি ক্যাম্পও অবশিষ্ট নেই।

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ছবিতে দেখা যায়, আরাকান আর্মির সদস্যরা শহরের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের বাইরে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।

এদিকে শহর দখলের সময় জান্তা বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। তবে এ বিষয়ে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য আসেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরাকান আর্মির দ্বারা পালেতোয়ার দখল জান্তা জেনারেলদের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা।

আরাকান আর্মি দাবি করেছে, তাদের বাহিনীতে প্রায় ৩০ হাজার সেনা রয়েছে। গেলো অক্টোবরের শেষদিকে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) সাথে তথাকথিত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সে অংশ নিয়েছে তারা। এর পরপরই জান্তা সরকারে বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করেছে তারা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, পালেতোয়া শহরের নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অঞ্চলটি বাংলাদেশেরও নিকটবর্তী, দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার।

সীমান্ত লাগোয়া পালেতোয়ায় ভারতের অর্থায়নে কোটি কোটি ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। দূরবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে সেখানে বিনিয়োগ করেছে ভারত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পালেতোয়ার ঘটনাপ্রবাহের দিকে দিল্লির তীক্ষ্ণ নজর থাকবে।

এদিকে পালেতোয়ার কালাদান নদীর বন্দরটিও এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে, ভারতীয় সীমান্তে যাতায়াতের সড়ক ও নৌ-পরিবহনের নিয়ন্ত্রণও এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে চলে গেলো। সেই সাথে সামরিক সরঞ্জামসহ একটা ঘাঁটি পেয়ে যাওয়ায় এখান থেকে রাখাইন রাজ্যে আরও আক্রমণ পরিচালনা করতে পারবে তারা।

আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইন রাজ্যভিত্তিক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকানের (ইউএলএ) সামরিক শাখা। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি তুলে প্রায় এক যুগ আগে এর সাংগঠনিক উদ্যোগ শুরু হয়।

রাখাইন নৃগোষ্ঠীর (আরাকানি) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই সংগঠন নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সামনে আনতে চায়। বর্তমানে এটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কমান্ডার ইন চিফ মেজর জেনারেল তোয়ান মারত নাইং এবং ভাইস ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিও টোয়ান আং।

এর আগে মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। এর পরপরই দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়। জান্তার দমনপীড়নের মুখে তা সশস্ত্র রূপ নেয় এবং এরপর যতই সময় গড়িয়েছে তা আরও তীব্র হয়েছে।