শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছেড়ে কেন সহিংস রুপে বিএনপি?
নিজস্ব প্রতিবদেক : নয়াপল্টনে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর অবরোধ কর্মসূচির নামে আবারো জ্বালাও পোড়াও ও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আবার প্রমাণ হয়েছে বিএনপি মুখে যতোই না করুক না কেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিলো এবং আছে। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার পর ও জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশের চেষ্টা করে এবং সেদিনের সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির কর্মীদেরও দেখা গেছে।
বিএনপির সহিংস রাজনীতিতে ফিরে আসা নিয়ে এখন জনমনে নানামুখী প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে যে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছিল, সেই পথেই ফিরতে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আবারও গাটছড়া বাধলো বিএনপি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পরিণত হলো রক্তাক্ত সহিংসতায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৮ তারিখের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জামায়াতকে সাথে নিয়ে প্রথম থেকেই বিএনপি মারমুখী ছিল। বিএনপিকে যখন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, ঠিক সেই সময় বিএনপির অনড় অবস্থান দেখে শঙ্কা তৈরি হয়েছিলে যে, বিএনপি এবার সহিংস রূপে আবার ফিরে আসবে। আর এই অপতৎপরতায় নেপথ্যে থেকে সহায়তা দেবে জামায়াত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত কয়েকদিন ধরেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নতুন করে সম্পর্ক হয়েছে। এই সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে জামায়াত বিএনপির সাথে সমান্তরালভাবে আবার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা শুরু করেছে। জামায়াত শাপলা চত্বর এলাকায় সমাবেশ ডেকেছিলো।
কিন্তু জামায়াত যেহেতু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, সে জন্য শাপলা চত্বর এলাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সেখানে কঠোর অবস্থানের কারণে জামাত শেষ পর্যন্ত আরামবাগ এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে। যেহেতু জামায়াত বিএনপির প্রধান মিত্র এবং তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে পারছে না, সে কারণেই একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বিএনপি চেষ্টা করেছে।
তবে ২৮ অক্টোবরের হামলা ও নাশকতার মামলায় শীর্ষ নেতাদের আটকের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিএনপির সহিংসতার পেছনের কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় সারির এক নেতা বলেন, সহিংস হয়ে ওঠা ছাড়া এ সময় বিএনপির আর কোন পথ নেই। শেষ আঘাত হিসেবে ২৮ তারিখের কর্মসূচি নেয়া হয়েছিলো। জনগণের এটুকু ভোগান্তি হবে সেটাও আমাদের হিসেব নিকেশের ভেতরই ছিলো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অন্য কিছু করার নেই।
২৮ অক্টোবর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের দিন ব্যাপক সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুই জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর আটক করা হয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরো অনেককে। বিএনপির ডাকে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতাল পালিত হয়েছে।
এই হরতালের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ মোট তিন জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ শেষে আবারও ৫ ও ৬ নভেম্বর দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের খপ্পরে পড়েই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ ছেড়ে আবারও আগুনের পথে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহিংসতা বিষয়ে বলেন, ‘‘বিএনপি শুধু সন্ত্রাস চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের মাধ্যমে তথ্য-সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। যার মধ্য দিয়ে তাদের চিরাচরিত মিথ্যাচার-অপপপ্রচার ও গুজবের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে।
‘‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভুলণ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উগ্র-সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস বিএনপির রাজনীতির মূল অস্ত্র। এখন তারা তথাকথিত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের আড়ালে পুনরায় সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।’’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, আর অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত জোট কার্যত দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত আন্দোলনের ভয়ে কিংবা তাদের বিদেশি প্রভুদের ইচ্ছায় বাংলাদেশ চলবে না।
‘‘বিএনপির আসল উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন না, তাদের আসল উদ্দেশ্য আগুনসন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের পথে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচন বানচাল করা এবং অস্বাভাবিক-অসাংবিধানিক সরকার আনা। এবং বিএনপি জামায়াত সম্মিলিতভাবে যে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ করতে চেষ্টা করছে সেটা জনগণ মেনে নেবে না।’’
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মনে করেন, ‘‘জামায়াত কোনদিনই বিএনপিকে ছেড়ে যায়নি। আর বিএনপি কৌশল হিসেবে জামায়াত বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করতে চেয়েছে। সামনে যাই দেখাক না কেন তারা একই মায়ের পেটের সহদর। এটা বলছি তার কারণ তাদের জন্ম হয়েছে সন্ত্রাস করতে।’’