নারী হিসাবে বার বার ক্ষমতায় আসা অনেকের পছন্দ না: শেখ হাসিনা

টুইট ডেস্ক : একটি মুসলিম দেশে একজন নারী পাঁচবার সরকার প্রধান, যা অনেক দেশের পছন্দ নয়; এমনটা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করলেও এখন চলছে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে।

তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে নয়, সময়মতো সরকার গঠন করা হয়েছে, আর এতে বিএনপি অন্তর্জালা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, যতো বেশি বাধা আসে ততো বেশি ‘জোস’ আসে।

টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন আর পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে শনিবার সকালে নিজ বাড়ি টুঙ্গিপাড়া যান শেখ হাসিনা। সেখানে সমাধিসৌধে পৌঁছেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায়।

ছোটবোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে ফাতেহা পাঠ এবং দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি পরিবারের সদস্য ও টুঙ্গিপাড়ায় তার বাড়ির প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেন।

দুপুরে নিজ বাড়িতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর সমাধি থেকে তিনি টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয় আয়োজিত এক কর্মীসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজের বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটেই কর্মী সভায় হাজির হন।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বলেন, সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। একটি মুসলিম দেশে পাঁচবার নারী প্রধানমন্ত্রী এটা অনেকেরই পছন্দ নয়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেও চক্রান্ত আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা মুসলিম দেশের মেয়ে হয়ে পাঁচ বার ক্ষমতায় আসলাম, এটা অনেকের পছন্দ না। চক্রান্ত এখনও শেষ হয়নি। ষড়যন্ত্র এখনো আছে। এই খুনিরা, চক্রান্তকারীরা ও যুদ্ধাপরাধীরা; যাদের বিচার করেছি, তাদের একটা চক্রান্ত আছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা চক্রান্ত আছে।

তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রটা এই জন্য যে, আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থান এরকম, আমাদের দেশটার ওপর অনেকেরই নজর আছে। কাজেই এখানে বসে কেউ অন্য দেশের ওপরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, এখান থেকে অন্য দেশে বিমান হামলা করবে, সেট আমি মেনে নেবো না। আমার স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। আমরা স্বাধীন ভাবেই চলবো। আমর দেশ ছোট, কিন্তু জনগণই আমার বড় শক্তি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বসে অন্যদেশের ওপর হামলা করবে সেটা হতে দেয়া হবে না। অনুগত কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমাকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায়নি। মানুষ উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তড়িঘড়ি করে নয়, সময়মত সরকার গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেকে বলছেন তরিঘরি করে সরকার গঠন করছে। তরঘরি করার কিছু নাই। সরকারে গেলে কি করবো আর বিরোধী দলে গেলে কি করবো, তার সব কিছুই চূড়ান্ত করা ছিলো। আমরা একদিনও সময় নষ্ট করতে চাই না। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

নতুন করে অর্থনীতিতে ধাক্কা আসার আশঙ্কা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা। ফলে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েল হামলা করল, এ নিয়ে আমরা নিন্দা জানাই। সব সময় আমরা ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি। এ অবস্থায় জিনিসের দাম আরও বাড়বে। এর মধ্যে আমেরিকা হুথিদের আক্রমণ করলো। এটা যখন শুরু হয়ে গেল তখন তো অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন মূল কাজ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা। গ্রামে-গঞ্জে তেমন অসুবিধা নেই, ঢাকা শহরে একটু সমস্যা, মানুষের কষ্ট হচ্ছে, সেখানে জীবনযাত্রার মান একটু বেশি। বাজারে কিন্তু পণ্যের ঘাটতি নেই। যদি মনে হয়, কেউ জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হয়রানি করছে, আমাদের সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সরকার গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত সরকার গঠন করা হয়েছে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য। বিএনপির নেতৃত্ব না থাকায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, কিন্তু ভোট বানচাল করতে চেয়েছিল। বিএনপি নিজেরাই তাদের কার্যালয়ের চাবি হারিয়ে তালা ভাঙার নাটক করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচন করবে না। ওরা যে করবে না, সেটা আমরা জানি। ওরা করবে যে, ওদের নেতা কোথায়? যে দল নির্বাচন করে তার সমানে কেউ একজন থাকে, যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, দেশ চালাবেন। ওদের তো সে রকম যোগ্য কেউ নেই। একজন তো দুর্নীতিবাজ।

প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, দুর্নীতি আর এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ মামলার সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজন তো গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিংয়ে সাজাপ্রাপ্ত। এনিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই খুঁজে বের করেছে এবং তারা সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। ওই আমেরিকান গোয়েন্দাদের সাক্ষ্যতে তাদের সাজা হয়েছে।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আসলে বিএনপির সামনে কোনো নেতৃত্ব নেই। তাই, নির্বাচন করবে না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে। আগুন দিয়ে পোড়ানো সবচেয়ে জঘন্য কাজ। রেলের আগুনে মা ও ছোট্ট শিশু যেভাবে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলো, তারপর ফিস প্লেট তুলে ফেলা, বগি ফেলে দেওয়া, যাত্রীসহ বাসে আগুন দিয়ে পোড়ানো…।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, হাসপাতালে কেউ আক্রমণ করে? তিনি বলেন, ওই ইসরাইল করছে প্যালেস্টাইনে। আর আমাদের এখানে তারেক জিয়ার হুকুমে বিএনপি-জামায়াত তারা করলো। অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালে হামলা করে তারা দেখালো ওরা ইসরাইলের প্রেতাত্মা।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে, এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখা। জিনিসের দাম যেটা বেড়ে গেছে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা। আমি গ্রামে-গঞ্জে খুব অসুবিধা দেখি না। কিন্তু, যারা নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে, তাদের একটু সমস্যা। ঢাকার শহরে একটু বেশি। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় সব সময় একটু বেশি। বাজারে কিন্তু জিনিসের অভাব নেই। খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই।

দুই দিনের সফরে রোববার কোটালীপাড়ায় কর্মীসভায় বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ফিরে নতুন মেয়াদে তাঁর প্রথম কর্মদিবস শুরু করবেন।