আমেরিকার হামলায় ৫ হুথি সদস্য নিহত

ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর সশস্ত্র যোদ্ধাদের একাংশ। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের অভিযান এখনও চলমান আছে। তবে হুথিদের হামলার কারণে ‘রেড সি’-তে জাহাজ চলাচল হুমকির মুখে পড়ার পর শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) হুথিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত আমেরিকার নেতৃত্বাধীন হামলায় গাজা যুদ্ধ আবার সমগ্র বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

হুথিরা জানিয়েছে, তাদের অন্তত পাঁচ জন সদস্য নিহত ও ছয় জন সদস্য ওই হামলায় আহত হয়েছেন। তবে হামলাটির লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তারা বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি।

স্থানীয় সময় ভোরের কিছুক্ষণ আগে, ইরান সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। তবে ইরানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাওয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি সমর্থন করায় এই হামলায় অংশ নেয়নি সৌদি আরব।

কয়েকদিন আগে আমেরিকার নৌবাহিনী ইন্ডিয়ান ওশান থেকে দূরে একটি জাহাজে হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করে। এই হামলাটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রভাবে সমুদ্রে আধিপত্য বজায় রাখতে ইরানের আক্রমণের ইচ্ছার ইঙ্গিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে আমেরিকা তাদের তেল জব্দ করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) তেহরান আলাদাভাবে আরেকটি ট্যাংকার জব্দ করেছে।

আমেরিকার নেতৃত্বাধীন হামলার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না পাওয়া গেলেও হুথিরা জানিয়েছে এয়ারফিল্ড সহ পাঁচটি লক্ষ্যবস্তু হামলার শিকার হয়েছে।

হুথির ফরেইন মিনিস্ট্রির একজন কর্মকর্তা ‘হুসেইন আল-ইজি আমেরিকান ও বৃটিশ যুদ্ধজাহাজ, ‘সাবমেরিন ও যুদ্ধবিমানের সম্মিলিত একটি তীব্র হামলার মুখোমুখি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।’

অনলাইনে ইজি লেখেন-‘আমেরিকা ও বৃটেইনকে সন্দেহাতীতভাবেই এই অন্যায় আগ্রাসনের মূল্য দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’

হুথিদের প্রধান সমঝোতাকারী ও মুখপাত্র মোহাম্মেদ আব্দুল সালাম আমেরিকা ও বৃটেইনের করা এই হামলাকে ‘বোকামি’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি অনলাইনে আরো লেখেন, ‘তারা যদি ভেবে থাকে যে তারা প্যালেস্টাইন ও গাজাকে সমর্থন করা থেকে ইয়েমেনকে বিরত রাখতে পারবে তবে তারা ভুল ছিল।’ ‘হুথিরা ইযরায়েলি জাহাজ ও অধিকৃত প্যালেস্টাইনের বন্দরের উদ্দেশে আসা জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো চালিয়ে যাবে।’

হুথিদের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি বলেছে, ‘ইয়েমেনের ৫ টি হুথি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে চালানো আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ৭৩ টি হামলায় তাদের সামরিক শাখার ৫ জন সদস্য নিহত ও ছয় জন সদস্য আহত হয়েছেন।’

সারি বলেন,‘ইয়েমেনি জনগণের ওপর চালানো এই হামলার সম্পূর্ণ দায় অ্যামেরিকান ও বৃটিশ শত্রুদের।’ তাদের এই হামলার উপযুক্ত জবাব ও শাস্তি দেয়া হবে।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইয়েমেনে হুথিদের শক্ত ঘাঁটি সাদা-তে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) অসংখ্য মানুষ একটি সমাবেশের জন্য জড়ো হন। উপস্থিত জনগণ কিছুক্ষণ পর পর হুথিদের ‘সৃষ্টিকর্তা মহান, আমেরিকা ধ্বংস হোক, ইসরায়েল ধ্বংস হোক, ইহুদিদের প্রতি অভিশাপ, ইসলামের জয়’ স্লোগানটি দিতে থাকেন।’

ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন জোটের সবশেষ হামলার বিষয়ে সৌদি আরবের ফরেইন মিনিস্ট্রি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সৌদি আরব রেড সি অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপর জোর দেয়।’ ‘একই সঙ্গে সোদি আরব সংযম রাখার ও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানায়।’

অপরদিকে ইরানের ফরেন মিনিস্ট্রির মুখপাত্র নাসের কান্নানি এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বিবৃতিতে বলেন, এই ধরণের স্বেচ্ছাচারী হামলাগুলো নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা ছাড়া অন্য কোনো ফলাফলই বয়ে আনবে না, বলে মন্তব্য করেছেন।

হুথিদেরকে সমর্থনকারী লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে আমেরিকাকে ‘গাজায় জায়নবাদী গোষ্ঠীর ধ্বংসযজ্ঞ ও পৈশাচিকতার পূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

‘বেইজিংয়ে চাইনিজ ফরেইন মিনিস্ট্রির মুখপাত্র মাও নিং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রেড সি অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করি জড়িত সব পক্ষই রেড সি অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’’