শীতকালীন কোভিড ও ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণের ঝুঁকি: স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ বাড়ছে

প্রতীকী ছবি

বিশ্ব ডেস্ক: নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের রোধে টিকা নেয়ার হার কম হওয়ায় শীতকালীন মৌসুমে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে। এই প্রস্তুতিতে অনেক দেশে ফ্লু ও কোভিডের টিকা নেয়ার হার অত্যন্ত কম হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহে অ্যামেরিকা, বেশ কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশ ও অন্যান্য অংশে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কোভিড মহামারির সময়ের চেয়ে বেশ কম হলেও কয়েকটি অঞ্চলের বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে মৃত্যুহার বেড়ে গেছে।

কোভিড মহামারির সময়ের চেয়ে বেশ কম হলেও কয়েকটি অঞ্চলের বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে মৃত্যুহার বেড়ে গেছে।

কয়েকটি অ্যামেরিকান হাসপাতালের মতো স্পেনের সরকারও হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পুনরায় মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম জারি করেছে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এর অন্তর্বর্তীকালীন অতিমারি ও মহামারি প্রস্তুতি পরিচালক মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছেন, ‘‘আমরা যখন প্রতিরোধ করতে পারি এখন ঠিক সেই সময়েই অনেক মানুষের ফ্লু ও কোভিডের জন্য জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন।’’

তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব যখন মহামারি ও এর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তখন এই মৌসুমে অনেক দেশে কোভিড ও ফ্লু এর সংক্রমণ রোধে অনেক কম টিকা নেয়ার হার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘বিভিন্ন দেশের সরকার ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরও টিকা নেয়া বা ভ্যাকসিনেশনের সুবিধা আদায়ের সঙ্গে কোভিডের তৈরি ঝুঁকিগুলোর সমন্বয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

সব প্রাপ্তবয়স্কদের এই মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য টিকা নেয়ার পরামর্শ থাকার পরও সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ও প্রিভেনশনস ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন এর একটি জরিপে দেখা যায়, আমেরিকায় এই মৌসুমে মাত্র ১৯.৪ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক কোভিডের টিকা নিয়েছেন। গত মৌসুম ২০২২-২৩ মৌসুমে সিডিসির কাছে স্টেইটগুলোর পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ১৭ শতাংশ আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা নেয়ার হারের তেমন পার্থক্য নেই।

সিডিসির প্রতিবেদনে আর বলা হয়, ‘১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী আমেরিকান প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রায় অর্ধেক (৪৪.৯ শতাংশ) এই বছর ফ্লু এর টিকা নিয়েছেন যা গত বছর এই বয়সী আমেরিকানদের টিকা নেয়ার হার ৪৪ শতাংশের প্রায় সমান বলা যায়।’

সিডিসি পরিচালক ম্যান্ডি কোহেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের মনে হয়না যে, ‘যথেষ্ট মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন বা টিকার উন্নত সংস্করণটি পেয়েছে। অথচ তারা বুঝতে পারছে না যে, কোভিড এখনও ফ্লু এর থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।’

আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ব্যবহৃত হওয়া টিকার উন্নত সংস্করণের বেশিরভাগই জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক এর সহযোগিতায় ফাইজারের কিংবা মডার্নার তৈরি।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) জানিয়েছেন, ইউরোপে বর্তমানে কোভিডের চেয়ে ফ্লু এর ছড়ানোর হার বেশি। গত বছরের শেষ সপ্তাহে আসা ২৪ শতাংশ নমুনার সবগুলোই ফ্লু পজিটিভ ছিল। এই হার তার আগের সপ্তাহে ছিল ১৯ শতাংশ।

ইসিডিসির শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এদোয়ার্দো কোলজানি বলেছেন, ফ্লু-তে আক্রান্তের হার আগের মৌসুমগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাড়ছে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছে কোভিড।

ইসিডিসির কাছে বর্তমানে পুরো মহাদেশের কোভিড টিকা নেয়ার হার এর কোনো তথ্য নেই। তবে কোলজানি বলেছেন, ‘প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে মহামারি চলাকালীন সময়ের তুলনায় মানুষের কোভিড টিকা নেয়ার হার বর্তমানে অনেক কম।’

ইউরোপে বর্তমানে শুধু বয়স্ক নাগরিক সহ উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন এমন শ্রেণীর মানুষকে কোভিড টিকার নতুন সংস্করণটি দেয়া হচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ‘এই শ্রেণীর সব মানুষকেই টিকার আওতায় আনতে হবে। ডব্লিউএইচও আরও জানিয়েছে, এটি এখনও কোনো মৌসুমী ভাইরাসে পরিণত না হওয়ায় তাদের গ্রীষ্ম মৌসুম চলাকালীন দক্ষিণ গোলার্ধে কোভিড আক্রান্তের হার বাড়ছে।’

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ‘গত মাসে বিশ্বজুড়ে নতুন করে ৮৫০ হাজার নতুন কোভিড আক্রান্ত ও ১১৮ হাজার নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে যা নভেম্বরের কোভিড আক্রান্ত ৫২ শতাংশ ও হাসপাতালে ভর্তির হার ১৩ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।’

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্‘রচলিত টিকাগুলো সংক্রমণ আটকাতে না পারলেও সেগুলো মারাত্মক অসুখ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজ জার্নালে প্রকাশিত ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট ও সুইডেনের ড্যান্ডারিড হসপিটালের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে এক্সবিবি ডট ওয়ান ডট ফাইভ বরোনাভাইরাস সংস্করণকে লক্ষ্য করা টিকার নতুন সংস্করণটি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ৭৬.১ শতাংশ কমিয়েছে।’ এই গবেষণায় ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জরিপের আওতায় আনা হয়েছে।