রাজশাহীতে ভোটে আওয়ামীমনা দুই প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর দুটি আসনে আওয়ামীমনা দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁদের একজন নারী এবং অন্যজন আইনজীবী। দুজনই অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

মনোনয়ন দাখিল করা প্রার্থীরা হলেন- রাজশাহী-৩ (পবা–মোহনপুর) আসনে হাবিবা বেগম এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া–দুর্গাপুর) আসনে আইনজীবী রায়হান কাওসার।

হাবিবা বেগম মোহনপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি মোহনপুর উপজেলার সিংহমারা গ্রামে। তিনি উপজেলা কৃষক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর স্বামী মাসুদ রানা আগে চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার করতেন। গত বছরের জুলাইয়ে ওই দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়।

এর আগে হাবিবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ছিলেন। সে সময় এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। তবে হাবিবা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী ছিলেন। এ নিয়ে আয়েনের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়। ওই সময় আয়েন অনুসারীরা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাবিবার দাবি, ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাতটি মামলায় তাঁকে সাতবার কারাগারে যেতে হয়েছে। মামলাগুলো মিথ্যা ছিল বলেও তিনি দাবি করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসাদুজ্জামান আসাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে হাবিবার রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত হয়। এরপর গত বছরের ২৯ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২২ জুলাই মোহনপুর থানার দুই নারী কনস্টেবলের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন। পরে ২২ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সম্মানী ভাতা চালু রাখার দাবি জানান তিনি।

মনোনয়ন দাখিলের বিষয়ে হাবিবা বেগম বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সময়েই নির্যাতনের শিকার হয়েছি, এটা সবাই জানে। তাই ৫ আগস্টের পরও আমার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করেনি। আমি এলাকায় আছি। মানুষ আমাকে চেনে ও ভালোবাসে। উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আছে, এবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ালাম। ভোটের পরিবেশ ভালো থাকলে ফলও ভালো হবে বলে আশা করি।’

অন্যদিকে রায়হান কাওসারের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার হরিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করায় তাঁকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর বুলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রায়হানের ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একে যেখানেই পাবেন, প্রশাসনের হাতে তুলে দিন।’

এ ছাড়া পুঠিয়া উপজেলা যুবদলের নেতা দেলোয়ার সরকার আল আমীন ফেসবুকে লেখেন, ‘রাজশাহী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দোসর ও মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট রায়হান কাওসার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। ভোট করার সাহস সে কোথা থেকে পেল? একে প্রতিহত করতে হবে।’

এসব অভিযোগের জবাবে রায়হান কাওসার বলেন, ‘যে কেউ যে কোনো দলের মনোনয়ন চাইতেই পারে। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম -এটা সত্য। কিন্তু এখন আমি কোনো দলের পরিচয় দিচ্ছি না। তবু আমাকে ট্যাগ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। পড়াশোনায় ও পেশাগত জীবনে আমার অবস্থান সবাই জানে। আমি পরিবর্তনের কথা বলছি। জিতব -এমন দাবি করছি না। তবে একটি সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ গড়তে মানুষ আমাকে ভোট দেবে বলে আশা করি।’

রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৩৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সব আসনেই বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে। পাঁচটি আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং দুটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির চারজন বিদ্রোহী প্রার্থীও মাঠে রয়েছেন।