ছেলের হাতে প্রাণ গেল বাবার—রংপুরে হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি

হৃদয়বিদারক পারিবারিক ট্র্যাজেডি। পারিবারিক কলহে প্রাণ গেল পিতার। বাবাকে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ পুত্রের। এক মুহূর্তের রাগে শেষ হলো একটি জীবন।

আব্দুল্লাহিল শাহীন, রংপুর: রংপুর সদরের মমিনপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রাম আজ শোকে স্তব্ধ। সন্তানের হাতে বাবার মৃত্যু—এমন মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা পুরো এলাকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

পারিবারিক কলহের জেরে নিজের জন্মদাতা পিতাকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক পুত্র, যা মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে মহেশপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি লুলু মিয়া (৫০), স্থানীয়ভাবে একজন সাধারণ ও পরিচিত মানুষ ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে বাড়ির ভেতর ছেলে মাসুদের সঙ্গে বাবার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেই কথাকাটাটি ভয়াবহ রূপ নেয়। উত্তেজনার মুহূর্তে ছেলে মাসুদ ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবার ওপর হামলা চালায়।
রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লুলু মিয়া। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস—হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই পথেই তার মৃত্যু হয়। মুহূর্তেই একটি পরিবার হারায় তাদের অভিভাবককে, আর একটি সন্তান নিজ হাতে নিজ ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়।

ঘটনার পর আর পালিয়ে না গিয়ে অভিযুক্ত ছেলে মাসুদ নিজেই রংপুর কোতোয়ালি সদর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহকেই হত্যার কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় মহেশপুর এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক ও আতঙ্ক। প্রতিবেশীদের চোখে-মুখে বিস্ময়—কীভাবে একটি পারিবারিক বিরোধ এমন রক্তক্ষয়ী পরিণতি ডেকে আনতে পারে? পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব বিষয় খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি মুহূর্তের রাগ, একটি ভুল সিদ্ধান্ত—আর তাতেই শেষ হয়ে গেল একটি প্রাণ, ভেঙে চুরমার হয়ে গেল একটি পরিবার। এই ট্র্যাজেডি যেন আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সংযম হারালে কত ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।