পার্বত্য অঞ্চলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্থাপনের পরিকল্পনা: ৬৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব

“বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে নতুন ব্যাটালিয়ন, এডিবি’র অর্থায়নে ৩ বছরের প্রকল্প”

অসীম রায় (অশ্বিনী), বান্দরবান: রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তিনটি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন মাউন্টেন) এবং একটি ডিআইজি পর্যায়ের সদর দপ্তর স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)-এর আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এই প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য পেয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। প্রস্তাবিত সময়কাল জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০২৮ (৩ বছর)। বছরে বাজেটের খরচ প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খরচ হবে ১৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ২৩৮ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ২৩৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

খাতভিত্তিকভাবে প্রকল্পে ১৫৫টি পার্বত্য চলাচল উপযোগী যানবাহন ক্রয়ের জন্য ১১২ কোটি টাকা বরাদ্দ, আবাসিক ভবন নির্মাণে ৩০৮ কোটি টাকা, অনাবাসিক ভবন নির্মাণে ৯৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামোর জন্য ৮৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বৃদ্ধি এবং পুলিশ বাহিনীকে প্রযুক্তিনির্ভর ও শারীরিকভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা। এছাড়া, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের কার্যকর দমন এবং দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও লক্ষ্য। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্সের প্রয়োজন, কারণ থানা পুলিশ মামলা তদন্ত ও দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকায় উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন অপরাধীদের দমন কার্যক্রম সীমিত।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন্দল হ্রাস পাবে এবং পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সেক্টর ডিভিশন প্রকল্পের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিনিধিদের মতামত চাওয়ার সুপারিশ করেছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা এবং অবকাঠামো নির্মাণের কারণে পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবও পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি কাজ করছে। পূর্বে ‘মাউন্টেন পুলিশ’ নামে বিশেষ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব থাকলেও, এটি এখন পূর্ণাঙ্গ ব্যাটালিয়ন হিসেবে প্রস্তাবিত।

প্রকল্পটি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গুরুত্ব বহন করছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু হবে এবং পার্বত্য এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।