চীনের ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ সামরিক মহড়া শুরু

চীনের ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ সামরিক মহড়া: তাইওয়ানকে ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধি।

টুইট প্রতিবেদক: চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-এর ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে তাইওয়ান দ্বীপকে ঘিরে বৃহৎ সামরিক মহড়া শুরু করেছে, যার কোডনাম ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’। মহড়ায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং রকেট ফোর্সের ইউনিটগুলো অংশ নিচ্ছে।

চীনা কর্তৃপক্ষ এটিকে “তাইওয়ান স্বাধীনতা”পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল শি ই জানিয়েছেন, মহড়া তাইওয়ান স্ট্রেইটের পাশাপাশি দ্বীপের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে। মহড়ার লক্ষ্য হলো সমুদ্র-আকাশ যৌথ যুদ্ধ প্রস্তুতি, যৌথ অভিযানে সমন্বিত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, মূল বন্দরে অবরোধ স্থাপন এবং দ্বীপের বাইরের লাইনে বহুমুখী প্রতিরোধ গঠন।

২৯ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান, ড্রোন এবং দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করে নড়াচড়াকারী স্থল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের অনুশীলন চলছে। নৌ ও বিমান বাহিনী একাধিক দিক থেকে দ্বীপের কাছে প্যাট্রোল করছে, যাতে দ্রুত মোবিলাইজেশন এবং পদ্ধতিগত অবরোধের সক্ষমতা যাচাই করা যায়।

চীন প্রথমে পাঁচটি অবরোধ সেক্টর ঘোষণা করেছিল, পরে আরও দুটি যোগ করে মোট সাতটি অঞ্চলে মহড়া পরিচালনা করছে। এতে তাইওয়ানের মূল বন্দর যেমন কিলুং এবং কাওশিউং-এর অবরোধ অনুশীলনের মাধ্যমে দ্বীপের সমুদ্রপথে সরবরাহ ও বাণিজ্যিক রুট বিচ্ছিন্ন করার সম্ভাব্য পরিস্থিতি অনুকরণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) লাইভ-ফায়ার অনুশীলন অনুষ্ঠিত হবে।

মহড়াটি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই প্যাকেজে HIMARS রকেট, সেল্ফ-প্রপেল্ড হাউইটজার, জ্যাভেলিন এবং TOW অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইলসহ উন্নত অস্ত্রশস্ত্র অন্তর্ভুক্ত। ১৮ ডিসেম্বর ঘোষিত এ প্যাকেজের পর চীন কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায় এবং ২৬ ডিসেম্বর ২০টি মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানি ও ১০ জন নির্বাহীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া

তাইওয়ান মহড়াকে “অযৌক্তিক উস্কানি” আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। তাইপেই সেনা মোতায়েন করেছে এবং মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিরোধ অনুশীলন করছে। এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, ডজনখানেক চীনা জাহাজ ও বিমান দ্বীপের কাছে ঘোরাফেরা করছে, কিছু ইচ্ছাকৃতভাবে কাছাকাছি আসছে।

আঞ্চলিক প্রভাব

বিশ্লেষকরা বলছেন, মহড়া চীনের সম্ভাব্য অবরোধ বা আক্রমণের প্রাক-পর্যায়ের অনুকরণ, যেখানে রাজনৈতিক হুমকি, অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পরবর্তী পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ অন্তর্ভুক্ত।

তাইওয়ান স্ট্রেইটের এই উত্তেজনা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি কনটেইনার শিপিং এবং সেমিকন্ডাক্টর সাপ্লাই চেইনের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, গ্লোবাল টাইমস, চায়না ডেইলি, আল জাজিরা, এপি নিউজ এবং তাইওয়ান নিউজ।