খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত

টুইট ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যে তিনটি আসনে নির্বাচন করার কথা, সব কটিতে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে দলটি। বগুড়া, দিনাজপুর ও ফেনীর তিনটি আসনে তাঁর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো আজ জমা দেওয়ার কথা।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থিতায় রদবদল এনেছে বিএনপি। মাঠপর্যায়ের জরিপ, অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
খালেদা জিয়া মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি। মাঠপর্যায়ের জরিপ, অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে আজ সোমবার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন ওই আসনের নির্বাচন সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু)। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে তিনি বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এবং দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
মোরশেদ আলম ও জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনায় তাঁরা নিজেদের জন্যও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। চূড়ান্ত নির্দেশনা পাওয়ার তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসনেও নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রার্থী পরিবর্তন
এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও মিত্রদের জন্য ১৫টি আসন ছেড়েছে বিএনপি। তবে দলের প্রার্থী বদল বা নতুন করে যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের নাম গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজ সোমবার দলীয় প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ নামের তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসনেও নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। গতকাল রোববার দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে ওই আসনের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে।
ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন। তিনি প্রচারও শুরু করেছিলেন। পার্থ এখন ভোলা সদর আসনে নির্বাচন করবেন।
ঢাকা-১২ (তেজগাঁও-হাতিরঝিল-শেরেবাংলা নগর) আসনে সাইফুল আলম নীরবকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে আসনটি যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে লড়বেন।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য। গতকাল অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যুক্ত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামান। তিনি নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশের পর সেখানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় প্রার্থী পরিবর্তনের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও একাধিক আসনে প্রার্থী বদল হয়েছে। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। তাঁকে বাদ দিয়ে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে রাউজানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদ স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে গোলাম আকবর খন্দকারের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। গোলাম আকবর এ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় সভায় গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডাকা হয়নি। ২০ ডিসেম্বর ওই মতবিনিময় সভা হয়।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য। গতকাল অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যুক্ত হয়েছে। আসনটিতে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে। এর আগে চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে সরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনে (বন্দর-পতেঙ্গা) বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
গতকাল বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই আসন গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে দেওয়া হয়। তাঁর ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, যা এখনো আদালতে বিচারাধীন।
চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে সরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনে (বন্দর-পতেঙ্গা) বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া-কসবা), মুন্সিগঞ্জ-২ (টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং) ও মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর ও গজারিয়া) আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের পরিবর্তে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি তারেক রহমানের একান্ত সহকারী আবদুর রহমান সানির ভাই। মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে এক্মি গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সিনহাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
তাঁর পরিবর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদকে প্রার্থী করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের পরিবর্তে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মহিউদ্দিন আহমেদ এই আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল হাইয়ের ভাই।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গত শনিবার পদত্যাগ করেছেন। তাঁকে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল। নড়াইল-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের পরিবর্তে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে প্রার্থী করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমার জানামতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত। প্রতিদিন একজন-দুজন করে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা যায়নি।
এ ছাড়া যশোর-১ (শার্শা), যশোর-৫ (মনিরামপুর) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসানকে বাদ দিয়ে শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনকে, যশোর-৫ আসনে ইকবাল হোসেনের পরিবর্তে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে, যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলামের পরিবর্তে কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেনকে আজাদ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুর ১ আসনে (শিবচর) কামাল জামাল মোল্লার পরিবর্তে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। পরে মিত্র ও শরিকদের আরও ১৫টি আসন ছাড় দেওয়া হয়। বাকি ১৩টি আসনেও মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত রাতে বলেন, ‘আমার জানামতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত। প্রতিদিন একজন-দুজন করে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা যায়নি।’
প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। সব নির্বাচনেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগমুহূর্তেও পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন কারণে এ পরিবর্তন করতে হয়।






