এখন নেতা দেশে আইসে, সব সমস্যার সমাধান হবি

টুইট ডেস্ক: দীর্ঘ নির্বাসন জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে ব্যাপক সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান যখন এভারকেয়ার হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন হাসপাতালটির সামনে আরও অনেকের মত অধীর অপেক্ষায় ছিলেন রিকশাচালক চাপাইনবাবগঞ্জের নাজমুলও।
কাছে গিয়ে তারেক রহমানের ফেরার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগতেছে। আল্লাহ দিলে আমাদের ভাড়াও হইতেছে। মনে করেন আমাদের দেশের নেতাকর্মী আইছে, দেখা হইছে।”
তার কথায়, “এখন নেতা দেশে আইসে, সব সমস্যার সমাধান হবি। রাস্তা-ঘাটের আন্দোলন-গ্যাঞ্জাম সব কমবি। এটাই আমরা চাই।”
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব মো. আব্দুল হাইও। বগুড়ার এ বাসিন্দা বললেন, “উনারা আমাদের পরিবারের মত। খুব ভালো। আগে থেকেই ওরা অনেক ভালো।”
বিএনপির ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওরা আসলিইতো সুন্দর হবি দ্যাশ। ওরা যখন চালাইসে দ্যাশ, খুব সুন্দর, মানুষ শান্তি পাছে। এখনো শান্তির জন্যি মানুষগুলান খাড়াইয়া আছে।
“এরা তো মার খাছে ১৫ বছর, তারা জানে কী করলি মানুষের ভালো হবে, দেশে শান্তি ফিরবে। এবার উনি দেশে শান্তি ফেরাবেন।”
প্রায় দেড় যুগ যুক্তরাজ্যে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাপক আয়োজন-উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশে ফিরেছেন তারেক রহমান। তাকে অভ্যর্থনা জানানো ও একপলক কাছ থেকে দেখতে বিমানবন্দর, ৩০০ ফিট এলাকা ও এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় ভিড় করেন নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষেরা। এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কৃষক মো. ইউনুছও।
তিনি বলেন, “আমরা তো সাধারণ মানুষ। আমরা এই দলটারে ভালোবাসি। আমরা তো কোনো নেতাও না। কিন্তু যেহেতু দলটারে ভালোবাসি, সেজন্য তারে দেখার জন্য অতি আগ্রহী আমরা।”
কিন্তু একসময়ে ‘নিপীড়নকারীরা’ বর্তমানে বিএনপির পদ-পদবি দখল করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সামনে আমরা সাধারণ মানুষ যারা এই দলটারে (বিএনপি) ভালোবাসি, এইটা থাকতে পারব কিনা, এটা ভালোবাসতে পারবো কিনা, সেইখানে আমাদের নেতা একটু দৃষ্টি দেবে, সেটাই আমাদের আশা।”
বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ টেনে ইউনুছ বলেন, “কিছু লোক যারা দোসর, তারা একবারে এদলে যায়, একবার ও দলে যায়। এরকমের কিছু লোক তারা আওয়ামী লীগের আমলে খুব সাধারণ মানুষের উপর অনেক নির্যাতন করছে। এখন আবার দেখি তারা বিএনপির বড় বড় নেতা হইছে।
“তো এরা আবার সাধারণ মানুষের উপর চাপ প্রয়োগ করবে। এই লোকগুলা আমাদের নেতা (তারেক রহমান) যাচাইবাছাই করবেন কিনা, যাতে সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে।”
এভারকেয়ারের সামনে রিকশাচালক মো. সবুজ মিয়া বলেন, “মনে হয় তারেক জিয়া আসাতেই দলটা (বিএনপি) শক্তিশালী হল। ভালো মনে হচ্ছে। এখন এরা দেশের ভালো মনে করে যদি কাজ করে যায়, আশা করি ভালো হবে।”
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার এ বাসিন্দা বলেন, “ইতোপূর্বে যারা করে গেছে, তার মত যদি হয়, তাদের মতই হবে এদের ভবিষ্যত।”
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহতাসিম হক আবির বলেন, “দীর্ঘ ১৭ বছর পর তিনি দেশে ফিরলেন, যা সবাইকেই আশাবাদী করেছে। এখন তিনি তার কাজের মাধ্যমে মানুষের প্রত্যাশা কতটুকু ফুটিয়ে তুলতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।
“আশা করছি তিনি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করে দেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হবেন।”
ষাটোর্ধ্ব গৃহিণী সৈয়দা আশরাফুন নেছা বলেন, “আমার দৃষ্টিতে জিয়াউর রহমান অনেক ভালো ও নীতিবান মানুষ ছিলেন। আশা করি তারেক রহমান তার বাবার নীতি আদর্শ ধরে রেখে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন।
“তিনি দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশে শান্তি ফেরাবেন সেটাই আমার আশা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আজকে তার বক্তব্য শুনে আমি আশাবাদী। তিনি যদি এই ধারা ধরে রাখতে পারেন, আর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাহলে আশা করি তিনি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন।
“অধ্যাপক ইউনুস স্যারকে নিয়েও আমাদের অনেক আশা ছিল, কিন্তু একটি বছর পর এসে দেখছি সে আশায় কোনো কিছুই পূরণ হচ্ছে না। আশা করব, তারেক রহমান আমাদের একইভাবে নিরাশ করবেন না। তবে তাকে রাজনৈতিকভাবে আরও কৌশলী হতে হবে। তার বিরোধীরা অনেক কৌশল নিচ্ছে, সেগুলো তাকে মাথায় রাখতে হবে।”
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অপেক্ষায় থাকা চা দোকানি শান্ত আহমেদ রতন বলেন, “তারেক রহমানকে দেখে যা মনে হচ্ছে তিনি আগের থেকে অনেক বেশি পরিণত হয়েছেন। আগে তিনি যে ভুলগুলো করেছেন, আশা করি এবার সেই ভুলগুলো আর করবেন না।
“তিনি অনেকটা পরিণত হলেও তার দলের নেতাকর্মীদের তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে তিনি দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন, দেশের মানুষও তার উপর ভরসা রাখবে।”
নওগাঁর সুবরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অহিদুল ইসলাম বলেন, “আজকের জনসমুদ্র দেখে মনে হয়েছে, তারেক রহমান জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন আর জনগণও তাকে ও তার দলকে বেছে নেবে।
“বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে শিক্ষায় আমরা আর কোনো বৈষম্য চাই না। একযোগে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ চাই। আশা করি বিচ্ছিন্নভাবে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হবে না।






