রাজশাহীতে সার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, কৃষকরা বিপাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় সার ডিলারদের অব্যাহত দৌরাত্ম্যে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ কৃষকরা। কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তার সহায়তায় কিছু ডিলার নিয়মবহির্ভূতভাবে সার বিক্রি ও পাচার করছেন। এরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সার বেশি দামে বিক্রি করছে এবং অন্য উপজেলায় সার পাঠাচ্ছে।

ফলে প্রান্তিক চাষীরা বাধ্য হয়ে খোলা বাজার থেকে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝে মাঝে পাচারকালে ধরা পড়লেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যা ডিলারদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। তবে ডিলাররা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায় সার সরবরাহ দেরিতে হচ্ছে।

দূর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাপ্পি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাবিনা খান নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিবারের সদস্যদের নামে বিসিআইসি ডিলারশীপ নিয়ে সার বানিজ্য চালাচ্ছেন। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, তার গোডাউন থেকে এখন শুধু ইউরিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সাবিনা খানের এ কোম্পানির লাইসেন্স ২০১০ সালে বাতিল করা হয়। পরে রিট ও মামলার মধ্যেও কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নিয়মিত বরাদ্দ পাচ্ছেন। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া এবং সার চাহিদা অনুযায়ী না দেওয়া।

অন্যদিকে সাবিনা খানের চাচা কালাম উদ্দিন, যিনি এসএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ৮৮ মেট্রিক টন অবৈধ সার পাচারকালে আটক হন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, বরাদ্দ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলেও এক মাস পর আবারও বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়।

উপজেলার আরও কিছু ডিলারের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত সার বিক্রির অভিযোগ থাকলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১৮ নভেম্বর ২০ বস্তা ডিএপি সার পাচারের সময় মাড়িয়া ইউনিয়নের ডিলার নাজিম উদ্দীনের ম্যানেজারকে আটক করা হয়। এছাড়া ১১ ডিসেম্বর কাচুপাড়া এলাকায় লাইসেন্স বিহীন অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগে ১৩ বস্তা সার জব্দ করা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। তারা দাবি করছেন, দ্রুত এই অব্যবস্থার লাগাম না টানা হলে সার সংকট সৃষ্টি হবে এবং পুরো কৃষিখাত বিপর্যস্ত হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মিতা সরকার বলেন, রাজশাহীতে সার সংকট নেই, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তবে কোন ডিলার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।