দুর্গম পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

দুর্গম শৈয়ালপাড়া ও থাচিপাড়ায় পানির পয়েন্ট স্থাপন, উপকৃত শতাধিক পরিবার।

বান্দরবান প্রতিনিধি, অসীম রায় (অশ্বিনী): পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম ও সীমান্তবর্তী তিন পাহাড়—খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।

সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে রাঙামাটি জেলার দুর্গম ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্য নির্মূল এবং স্থানীয় জনগণকে সহায়তার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। অভিযান চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাঙামাটির জুড়াছড়ি উপজেলার দুর্গম শৈয়ালপাড়া এবং বান্দরবান জেলার থাচিপাড়া এলাকার মানুষের তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট সম্পর্কে অবহিত হন।

এলাকাবাসী জানান, এসব দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিশুদ্ধ পানির কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় জনগণকে প্রতিদিন আনুমানিক ৫০০ থেকে ৭০০ ফুট নিচে পাহাড়ি ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হতো। এই কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ায় নারী, শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছিলেন।

স্থানীয়দের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে পানির সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনীর টহলদল। এরই ধারাবাহিকতায় বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি রিজিয়নের আওতাধীন জুড়াছড়ি জোনের ব্যবস্থাপনায় গত ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে শৈয়ালপাড়া ও থাচিপাড়ায় দুটি পৃথক বিশুদ্ধ পানির পয়েন্ট স্থাপন করা হয়।

এই উদ্যোগের ফলে শৈয়ালপাড়ায় প্রায় ১০০ জন (১৬টি পরিবার) এবং থাচিপাড়ায় প্রায় ৩০০ জন (৭৫টি পরিবার) নিজ নিজ বসতবাড়ির নিকটেই নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাচ্ছেন। এতে করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হয়েছে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এসেছে স্বস্তি।

উল্লেখ্য, পুরো পানির প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ এই মানবিক উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সেনাবাহিনী সূত্র আরও জানায়, পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান যতদিন প্রয়োজন ততদিন অব্যাহত থাকবে।

একই সঙ্গে প্রান্তিক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও দুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমও চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।