প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত

৬৫ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল এক ধাপ বাড়াল সরকার, সর্বোচ্চ বেতন ৩৮,৬৪০ টাকা।

স্টাফ রিপোর্টারঃ দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে (দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা) উন্নীত করেছে সরকার।

এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রধান শিক্ষকদের মূল বেতন শুরু হবে ১৬,০০০ টাকা থেকে এবং সর্বোচ্চ ধাপ দাঁড়াবে ৩৮,৬৪০ টাকা।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। যদিও প্রজ্ঞাপনটি গত ১৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল বলে জানা গেছে।

আগের ও বর্তমান বেতন কাঠামো

এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন পেতেন। সে সময় তাদের মূল বেতন শুরু ছিল ১২,৫০০ টাকা, সর্বোচ্চ ধাপ ৩০,২৩০ টাকা। নতুন সিদ্ধান্তে বেতন গ্রেড এক ধাপ উন্নীত হওয়ায় আর্থিক সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি পদমর্যাদাও গেজেটেড কর্মকর্তার পর্যায়ে উন্নীত হলো।

কারা সুবিধা পাবেন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ইনফরমেশন অফিসার আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬৫,৫০২ জন প্রধান শিক্ষক এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়বেন। সরকার এ উন্নীতকরণে আনুষ্ঠানিক মঞ্জুরি দিয়েছে।

প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত শর্ত

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকগণকে সরকারি আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে
Basic Training for Primary Teachers (BTPT) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে।

দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ

সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। সিদ্ধান্তটি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা সুসংহত করবে। এতে করে তারা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও সৃজনশীল ও উদ্দীপ্ত ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করছে সরকার।

আদালতের রায় ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া

উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। তবে বিষয়টি দীর্ঘদিন প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতায় আটকে ছিল।

দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গত ২৮ অক্টোবর রিটকারী ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে সব প্রধান শিক্ষকের (৬৫,৫০২ জন) বেতন গ্রেড উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রয়োজনীয় সব ধাপ—

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি, অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সম্মতিজ্ঞাপন, প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন, শেষ করে অবশেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।

সহকারী শিক্ষকদের বেতন প্রসঙ্গ

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন (শুরুতে মূল বেতন ১১,০০০ টাকা)। তারা ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে আসছেন।

সরকার জানিয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার প্রস্তাব জাতীয় বেতন কমিশনে পাঠানো হয়েছে, যা বর্তমানে কমিশনের বিবেচনাধীন। কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক চিত্র

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী—
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৬৫,৫৬৯টি
শিক্ষার্থী: এক কোটির বেশি
শিক্ষক: পৌনে চার লাখের বেশি
সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ: ৩,৬৯,২১৬টি
বর্তমানে কর্মরত সহকারী শিক্ষক: ৩,৫২,২০৮ জন।

সরকার আশা করছে, প্রধান শিক্ষকগণ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সহযোগিতায় প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করবেন, যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করবে।